আসসালামু আলাইকুম আসা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছেন। সাধারণত আমাদের পেটে জীবাণু ঢোকার কারণে ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হয়ে থাকে। আর সেটা অধিকাংশ ক্ষেত্রে কয়েকদিনের মাঝেই সেরে যায়। তবে ডায়রিয়া থেকে যদি মারাত্মক পানিশূন্যতা হয়, তবে তা মৃত্যুর কারণও হতে পারে। 

আবার কয়েকবার পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হলেই আমরা অনেকে মেট্রোনিডাজল জাতীয় ওষুধ খেয়ে থাকি । ডায়রিয়া বন্ধ হয়ে গেলে আবার সেই ওষুধ খাওয়া ইচ্ছেমতো বন্ধ করে দিই। প্রকৃতপক্ষে এগুলো ডায়রিয়া কমানোর ওষুধ নয়। এগুলো অ্যান্টিবায়োটিক। সাধারণত অ্যানেরোবিক ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে । আর কোনো কারণে অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করলে তা পূর্ণ মেয়াদে সঠিকভাবে শেষ করতে হবে। যখন-তখন বন্ধ করে দেওয়া যাবে না। কিন্তু কথা হলো আদৌ ডায়ারিয়ায় সব সময় অ্যান্টিবায়োটিক লাগবে কি না।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ১৭০ কোটি শিশু প্রতিবছর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয় এবং ৫ লক্ষ ৩০ হাজার শিশুর মৃত্যু হয়ে থাকে । বিভিন্ন কারণে ডায়রিয়া হতে পারে। সাধারণত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার ফলে ডায়রিয়া হয়। এই কারণে পায়খানা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি পাতলা হয়ে যায়।

ডায়রিয়া:

সাধারণত পরিপাকতন্ত্রে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবী সংক্রমণের ফলে বার বার পাতলা পায়খানা হয়। যাকে আমরা ডায়রিয়া বলে থাকি। ডায়রিয়ার প্রধান কারণ হিসেবে রোটা ভাইরাসকে দায়ী করা হয়। এছাড়াও নোরো, ইন্টেরিক এডিনো, অস্ট্রো ও সাইটো মেগালো ভাইরাসও ডায়রিয়ার জন্য দায়ী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সাধারণত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৩ বা তার বেশিবার পাতলা পায়খানা হলে তাকে ডায়রিয়া বলে।

ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হওয়ার কারণ:

ডায়রিয়া বিভিন্ন কারণে হতে পারে । ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াতে আক্রান্ত হলে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভবনা থাকে। এছাড়া খাবার-দাবার ঠিক না থাকলেও ডায়রিয়া হতে পারে। আরো কয়েকটি কারণে ডায়রিয়া হয়, আসুন সেগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক–

(১) ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার কারণে।

(২) ফুড পয়েজিংয়ের কারণে ডায়রিয়া হতে পারে।

(৩) অস্বাস্থ্যকর মিষ্টি বা দুধ জাতীয় খাবার খেলে ডায়রিয়া হয়।

(৪)দূষিত ও নোংরা পানি পান করলে ডায়রিয়া হয়ে থাকে।

(৫) অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দীর্ঘদিন বসবাস করলে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

(৬) বাহিরের খোলা খাবার খাওয়ার কারণেও ডায়রিয়া হয়ে থাকে।

(৭) মাঝেমধ্যে কোন ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও ডায়রিয়ার বা পাতলা পায়খানার কারণ হতে পারে।

পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ার লক্ষণ:

পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ার লক্ষণ গুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো –

(১) কিছুক্ষণ পরপর পায়খানা বেগ লাগে।

(২) পায়খানায় চাপ দিলে অপেক্ষা  করতে পারে না। যে কারণে ‌পোশাকে পায়খানা করে ফেলা।

(৩) পেটে ও তলপেটে তীব্র ব্যথা হয়‌।

(৪) বারবার বমি হয়।

(৫) শরীরে ক্লান্তি অনুভব করা ও শরীর ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যায়। 

(৬) মাথা ঘুরায় ও মাথাব্যথা অনুভব হয়।

(৭) পাতলা পায়খানার সঙ্গে রক্ত বের হয়।

ডায়রিয়া ও পাতলা পায়খানা হলে ঘরোয়া উপায়:

পাতলা পায়খানা মূলত হজমসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে হয়ে থাকে। এ রোগে চিকিৎসা না নিলে পানি শূন্যতা ও শরীরের লবণের ভারসাম্যহীনতা হয়ে থাকে । পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া মারাত্মক কিছু নয়, তবে এটি সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করলে মৃত্যুও ঘটাতে পারে। ডায়রিয়ার চিকিৎসার জন্য কিছু ঔষুধ পাওয়া গেলেও এর কিছু ঘরোয়া প্রতিকার রয়েছে, যা খুব দ্রুত সুস্থতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে থাকে । 

চলুন জেনে নেই ঘন ঘন পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হলে করনীয় কি। পাতলা পায়খানা হলে ঘরোয়া উপায় বা ঘরোয়া পদ্ধতিতে নিরাময়ের উপায় –

(১) খাবার স্যালাইন:

পাতলা পায়খানা ও ডায়রিয়া হলে স্যালাইন খেতে হয়আমরা কম বেশি সবাই জানি । প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর আধা লিটার পানিতে একটি স্যালাইন মিশিয়ে খেতে হবে । এক্ষেত্রে স্যালাইন না থাকলে আপনি ঘরোয়া পদ্ধতিতে স্যালাইন তৈরি করে খেতে পারেন। পাশাপাশি ডাবের পানি, ভাতের মাড়, চিড়া ভেজানো পানি ইত্যাদি খেতে পারেন।

(২) পানি:

পাতলা পায়খানা ও ডাইরিয়া (diarrhea) হওয়ার কারণে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি ও লবণ বের হয়ে যায়। এসময় একটু বেশি পানি পান করুন। প্রতিদিন অন্তত গড়ে ৮ থেকে ১২ প্লাস পানি পান করার চেষ্টা করুন । 

(৩) ফলের রস:

পাতলা পায়খানা ও ডায়রিয়ার কারণে শরীর দুর্বল হয়ে যায়। শরীরে কোন শক্তি থাকে না। তাই বেশি বেশি ফলের রস পান করুন, যা শরীরের পানি শূন্যতা দূর করবে ও শরীরে শক্তি জোগাতে সাহায্য করবে।

(৪) মধু:

মধু প্রাকৃতিক গুন সম্পন্ন একটি উপাদান। মধু পাতলা পায়খানা দূর করতে বেশ সহায়ক। এজন্য এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে এক চামচ মধু, এক চামচ দারুচিনি নিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। দিনে দুই থেকে তিনবার এই মিশ্রণটি পান করলে খুব দ্রুত পাতলা পায়খানা থেকে মুক্তি পেতে পারেন ।

(৫) কলা:

পাতলা পায়খানা ও ডায়রিয়া দূর করতে কাঁচা ও পাকা কলা দুটি উপকারী। আপনি পাকা কলার সাথে অল্প টক দই নিয়ে ব্লেন্ড করে খেতে পারেন। কাঁচা কলা সিদ্ধ করে ভর্তা বানিয়ে সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খেলেও উপকার পাওয়া যাবে । 

(৬) জিংক ট্যাবলেট:

পাতলা পায়খানা হলে জিংক ট্যাবলেট খেতে পারেন। এটা গবেষণা প্রমাণিত যে জিংক ট্যাবলেট খেলে পাতলা পায়খানা এক-চতুর্থাংশ কমে যায়। তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়াই  ভালো।

(৭) লেবু পানি :

লেবুতে এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান আছে। এটি পাতলা পায়খানা বন্ধ করতে সাহায্য করে। এজন্য প্রথমে লেবু থেকে রস বের করে এক গ্লাস হালকা কুসুম গরম পানিতে এক চামচ চিনি ও এক চামচ লবণ মিশিয়ে শরবত তৈরি করুন। পাতলা পায়খানা দূর করতে এটি স্যালাইনের মত বারবার পান করুন। দেখবেন খুব দ্রুত পাতলা পায়খানা দূর হয়ে যাবেএবং রীরে শক্তি পাবেন ।

(৮) দই:

দই-তে আছে প্রোবায়োটিক, যা হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তাই পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হলে দিনে দুই থেকে তিন কাপ দই খেতে পারেন।

(৯) সরষে বীজ:

সরষে বীজে আছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। এটি পাতলা পায়খানা  বন্ধ করার জন্য বেশ কার্যকর। এক বাটি পানিতে ২-৪ চামচ সরিষা বীজ নিয়ে এক ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন। পাতলা পায়খানা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে এই পানি দিনে ৩ থেকে ৪ বার  পান করুন।

কখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে :

যদি আপনি একজন প্রাপ্তবয়স্ক হন এবং নিচের সমস্যগুলো অনুভব করেন তবে দেরি না করে অবশ্যই একজন ডাক্তারের কাছে কাছ থেকে পরমর্শ নেন ।

  • আপনার শরীর যদি জলশূন্য হয়ে পড়ে।
  • যদি প্রচন্ড পেট বা মলদ্বারে ব্যথা অনুভব করেন।
  • আপনার যদি রক্তাক্ত বা কালো মল ত্যাগ হয়।
  • আপনার দেহের তাপমাত্রা  102 ডিগ্রী ফারেনহাইটের উপরে উঠে যায়।
  • একটানা 3 দিন ধরে যদি বার বার পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত কিছু লোক অনিচ্ছাকৃতভাবেই প্রতিদিন 1 বা 2 পাউন্ড ওজন হারাতে পারে।গবেষণা অনুসারে, ডায়রিয়া একটি সাধারণ হজম সমস্যা যা পৌষ্টিকপদার্থের শোষণের ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয় যার কারণে ওজন হ্রাস ঘটে ।
  • আরো পড়ুন :রক্তে এলার্জি কমানোর উপায় ও রক্তে এলার্জি বেশির অসুবিধা।

পরিশেষে :

বলা যায় যে ,আমাদের মত গরমের দেশে ডায়েরিয়া খুবই স্বভাবিক অসুখ। তাই এই নিয়ে অযথা টেনশন করবেন না।আশা করছি এই আর্টিকেলটি আপনাদের সাহায্য করবে। তবে যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে মনে হয় দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।শিশুদের ডায়রিয়া হলে সাথে সাথে ডাক্তারকে জানান এবং তার পরামর্শ মত চলুন।স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিলে খুব সহজেই এর হাত থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব হয় ।

Write A Comment