তারাবিহ আরবি শব্দ, যা তারবিহাতুন শব্দের বহুবচন, যার অর্থ হলো আরাম, প্রশান্তি অর্জন, বিরতি দেওয়া, বিশ্রাম নেওয়া ইত্যাদি।রমজান মাসের রাতের বিশেষ ইবাদাত হচ্ছে তারাবি নামাজ। মূলত রমজানে মাসে এশার ফরজ ও সুন্নত নামাজের পর বিতরের আগে তারাবির নামাজ আদায় করতে হয়। সাধারণ নফল ও সুন্নতের চেয়ে অধিকতর মর্যাদাবান, গুরুত্বের দিক থেকে তারাবির নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ, যা ওয়াজিবের কাছাকাছি। দুই দুই রাকাত করে ১০ সালামে ২০ রাকাত তারাবির নামাজ আদায় করতে হয় তাই আরামের সঙ্গে আদায় করা হয়। সেজন্য এ নামাজকে তারাবির নামাজ বলা হয়। 

মূলত দীর্ঘ কিরাত তিলায়াতের মাধ্যমে সালাত আদায়  করার ক্ষেত্রে প্রতি ৪ রাকাত নামাজের পর পর বিশ্রাম নেয়া হয় বিধায় উক্ত নামাজকে তারাবিহ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ১২ মাসের মধ্যে কেবল রমজান মাসেই তারাবি নামাজ পড়া হয়।

তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল

 মূলত তারাবির নামাজ না সুন্নত আর না নফল। আসলে এটা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। এখন প্রশ্ন- সুন্নাতে মুয়াক্কাদা কি? এটা  ওয়াজিবের মতনই। ওয়াজিবের জন্য যেমন জবাবদিহী করতে হবে তেমনই সুন্নাতে মুয়াক্কাদার জন্যও জবাবদিহী করতে হবে। তবে একটা বিষয় অবশ্যই উল্লেখ্য করতে হয় যে, ওয়াজিবের ক্ষেত্রে ওয়াজিব পালন না করলে নিদিষ্ট কোনো শাস্তি পেতে হয় না, কিন্তু সুন্নাতে মুয়াক্কাদার ক্ষেত্রে অবশ্যই শাস্তির ব্যবস্থা আছে। তাই আমরা সবাই চেষ্ঠা করবো রমজান মাসে রোজা রাখার পাশাপাশি তারাবির নামাজ পড়বো। 

তারাবির নামাজের  রাকাত:

রাতের নামাজ তারাবিহ নামাজ, মানে রমযান  মাসে প্রতিদিন ইশার নামাজের ৪ রাকাত ফরজ, ২ রাকাত সুন্নত ও ২ রাকাত নফল নামাজের পর এবং বেতর নামাজের আগে তারাবির নামাজ পড়তে হয়। তারাবির নামাজে প্রতি দুই রাকাত দুই রাকাত করে ৪ রাকাত পর পর বিশ্রাম নিতে হয় কিছুক্ষ, এভাবে সম্পুর্ন সালাত আদায় করা হয়। 

তারাবিহর নামাজ কত রাকাত এই বিষয়ে অনেকের অনেক রকম মতবাদ আছে কারন তারাবির নামাজ কি পরিমান পড়তে হবে এই বিষয়ে সুনিদ্দিষ্ট কোনো নিয়ম বাধা নেই। এক্ষেত্রে 

  • হানাফি, শাফিয়ি, হাম্বলি ফিকহের অনুসারীগণ – ২০ রাকাত সালাত আদায় করেন
  • মালিকে ফিকহির অনুসারীগণ – ৩৬ রাকাত সালাত আদায় করেন
  • আহলে হাদীসেরা – ৮ রাকাত সালাত আদায় করেন।

তারাবি নামাজের ফজিলতএবং হাদিস :

রমজান মাসে তারাবিহ  নামাজের ফজিলত অপরিসিম।তারাবিহ  নামাজের   মর্যাদা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইমান ও আত্মবিশ্লেষণের সঙ্গে পুণ্য লাভের আশায় রোজা রাখেন, তারাবিহ  নামাজ পড়েন এবং কদরের রাতে জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত করেন, তাঁর জীবনের পূর্বের সব গুনাহ মাফ করা হবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বাণী প্রদান করেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমান ও ইহতিসাবের সঙ্গে সওয়াব প্রাপ্তির আশায় রোজা রাখেন, তারাবি নামাজ পড়েন এবং কদরের রাতে জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত করেন, তাঁর জীবনের আগের সব গুনাহ মাফ করা হবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)

তারাবিহর নামাজের নিয়ত:

নামাজের নিয়ত করার মানে হচ্ছে মন থেকে নামাজের শুরু করার ধারনা এক্ষেত্রে বাংলায় হোক বা আরবীতে উভয় ক্ষেত্রেই নামাজ পড়া যাবে। তাই যদি আরবী একান্তই না জানা থাকে এক্ষেত্রে বাংলায় নিয়ত করা যাবে। 

আরবীতে তারাবিহর নামাজের নিয়ত:

نويت ان اصلى لله تعالى ركعتى صلوة التراويح سنة رسول الله تعالى متوجها الى جهة الكعبة الشريفة الله اكبر

বাংলা উচ্চারণ:

নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা, রাকাআতাই সালাতিত তারাবিহ সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তায়ালা, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার।

অর্থ:

আমি কেবলামুখি হয়ে দু’রাকাত তারাবির সুন্নতে মুয়াক্কাদা নামাজের নিয়ত করছি; আল্লাহু আকবার।

অতঃপর, আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী পবিত্র রমজান মাসে সকলের উচিত ইবাদত করা। ঠিক ভাবে রোজা রাখা এবং নিয়মিত নামাজ পড়া। 

তারাবিহ  নামাজের দোয়া:

প্রত্যেক দুই রাকাআ’ত পর সালাম ফিরানোর পর ইসতেগফার পড়তে হয়, দুরুদ পড়তে হয়, আল্লাহর স্মরণে জিকির করতে হয়। তারপর চার রাকাআ’ত হলেও কুরআন হাদিসের দুআ’গুলো পড়া হয়; যে দুআ’গুলো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে পড়া হয়। কিন্তু তারাবির যে দুআ’টি বর্তমানে জারি আছে, এই দুআ’টি কোরআন-হাদিস সম্বলিত নয়; এটিও কোনো এক বুজুর্গ ব্যক্তি লিখে এর প্রচলন করেছেন, যার অর্থও ভালো বিধায় আমরা পড়ে থাকি।

আরবীতে তারাবিহ  নামাজের দোয়া

سبحان ذى الملك والملكوت سبحان ذى العزة والعظمة والهيبة والقدرة والكبرياء والجبروت . سبحان الملك الحى الذى لاينام ولا يموت سبوح قدوس ربنا ورب الملئكة والروح.

বাংলা উচ্চারণ :

সুব্হানাযিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুব্হানাযিল ইয্যাতি, ওয়াল আয্মাতি, ওয়াল হাইবাতি, ওয়াল কুদরাতি, ওয়াল কিবরিয়াই, ওয়াল যাবারুত। সুব্হানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাজি লা-ইয়ানামু ওয়ালা ইয়ামুতু আবাদান আবাদা। সুব্বুহুন কুদ্দুছুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রূহ।

অর্থ:

আল্লাহ পবিত্রময় সাম্রাজ্য ও মহত্ত্বের মালিক। তিনি পবিত্রময় সম্মান মহত্ত্ব ও প্রতিপত্তিশালী সত্তা। ক্ষমতাবান, গৌরবময় ও প্রতাপশালী তিনি পবিত্রময় ও রাজাধিরাজ যিনি চিরঞ্জীব, কখনো ঘুমায় না এবং চির মৃত্যুহীন সত্তা। তিনি পবিত্রময় ও বরকতময় আমাদের প্রতিপালক, ফেরেশতাকুল এবং জিবরাইলের (আ.) প্রতিপালক।

তারাবিহ  নামাজের মোনাজাত:

তারাবিহ  নামাজের প্রত্যেকচার রাকাআ’ত পর পর মোনাজাত করা যায়, আবার একেবারে নামাজ শেষ করেও একবারেই মোনাজাত করা যায়।বেশি বেশি জিকির করতে পারেন 4 রাকাত পর পর। তারাবির নামাজের মোনাজাত এ আপনি আপনার মন খুলে আল্লাহর কাছে চাইতে পারেন।

আরবীতে তারাবিহ  নামাজের মোনাজাত:

اَللَهُمَّ اِنَّا نَسْئَالُكَ الْجَنَّةَ وَ نَعُوْذُبِكَ مِنَ النَّارِ يَا خَالِقَ الْجَنَّةَ وَالنَّارِ بِرَحْمَتِكَ يَاعَزِيْزُ يَا غَفَّارُ يَا كَرِيْمُ يَا سَتَّارُ يَا رَحِيْمُ يَاجَبَّارُ يَاخَالِقُ يَابَارُّ – اَللَّهُمَّ اَجِرْنَا مِنَ النَّارِ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ- بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّحِمِيْنَ

বাংলা উচ্চারণ :

আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকা জান্নাতা ওয়া নাউ’জুবিকা মিনান্নারী, ইয়া খালিকাল জান্নাতা ওয়ান্নারী, বিরহতিকা ইয়া আজিজু, ইয়া গাফ্ফারু, ইয়া কারীমু, ইয়া সাত্তারু, ইয়া রাহীমু, ইয়া জাব্বারু, ইয়া খালিকু, ইয়া বার্র। আল্লাহুম্মা আযিরনা মিনান্নার; ইয়া মুযিরু, ইয়া মুযিরু, ইয়া মুযির। বিরহমাতিকা ইয়া আর হামার রাহিমিন।

তারাবিহর নামাজ পড়ার নিয়ম :

বাংলাদেশে তারাবীহর নামাজের দুটি পদ্ধতি প্রচলিত। একটি খতম তারাবীহ আর অন্যটি সূরা তারাবীহ। খতম তারাবীহর ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ কুরআন পাঠ করা হয়। খতম তারাবীহর জন্য কুরআনের হাফিযগণ ইমামতি করেন। সূরা তারাবীহর জন্য যেকোন সূরা বা আয়াত পাঠের মাধ্যমে সূরা তারাবীহ আদায় করা হয়।

তারাবির নামাজ রমজানে পরার নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম রয়েছে। যা একজন মুসলমান হিসেবে অবশ্যই জানতে হবে। তারাবির নামাজ পড়ার আগে নিয়ত করতে হয়। অন্যদিকে চার রাকাত পর পর তারাবির নামাজের নির্দিষ্ট কিছু দোয়া রয়েছে। আপনি সেই দোয়া গুলো মুখস্থ করে তারাবির নামাজের চার রাকাত পরপর পড়বেন। 

পবিত্র রমজানে এশার নামাজের চার রাকাত ফরজ ও দুই রাকাত সুন্নতের পর, বিতর নামাজের আগে তারাবিহ নামাজের জন্য নিয়ত করতে হবে। এরপর সানা পরে ,সূরা ফাতেহা পাঠ করে আর একটি সূরা বা কুরআনের আয়াত পাঠ করতে হবে। এভাবে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে সালাম ফিরতে হবে।৪ রাকাতে দোয়া- দরূদ পাঠ করে মোনাজাত করতে হবে। এভাবে দুই রাকাত করে ১০ সালামে যে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করে, দোয়া- দরূদ ও মোনাজাতের মাধমে নামাজ শেষ করতে হবে।  

আরো পড়ুন :অনলাইনে জমির দলিল যাচাই ও বের করার নিয়ম।

পরিশেষে :

বলা যাই যে ,রমজানের গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল হচ্ছে তারাবিহ। রমজানে ৩০ টা রোজার পাশাপাশি তারাবি পড়তে হয়।তাই তারাবি নামাজের নিয়ত, দোয়া ও মোনাজাত আমাদের শিখা উচিত এবং রমজানে বেশি বেশি নামাজ কুরআন তেলাওয়াত ও নেক আমল করা। আপনারা যারা তারাবি নামাজ পড়তে যাবেন তারা অবশ্যই আজকের এই পোস্ট সাহায্যে করবে। 

Write A Comment