থানকুনি আমাদের অতি পরিচিত একটি পাতা।থানকুনি পাতা এমন একটি ভেষজ উপাদান, যা নিয়মিত খেলে সেরে যেতে পারে শরীরের নানা রকম সমস্যা। আগে এই সহজলভ্য জিনিসটি দেখা যায় বাড়ির আশেপাশে। এছাড়াও বাজারে পাওয়া যায় এই থানকুনি পাতা। এই থানকুনি পাতার এমন অনেক ভেষজ গুণ রয়েছে,যা নিয়মিত খেলে আপনাকে পেটের অসুখে আর কোনদিনও ভুগতে হবে না । রান্না করে কিংবা কাঁচা যে কোনও ভাবে এই পাতা খাওয়া যায় । নিয়মিত এই থানকুনি পাতা খেলে শরীর-স্বাস্থ্য সতেজ থাকার পাশাপাশি আপনার যৌবনও ধরে রাখতে পারবেন আপনি।
গ্রামাঞ্চলের পরিচিত একটি ঔষধি গাছ থানকুনি। প্রায় সারাবছরই এটি পাওয়া যায়। নানা গুণে পরিপূর্ণ থানকুনি পাতা বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া যাই । এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ভর্তা, ভাজি, বড়া কিংবা সালাদ। আজ চলুন থানকুনি পাতা খাওয়ার পদ্ধতিগুলো জেনে নিই-
থানকুনি পাতার জুস:
থানকুনি পাতার অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে। সুস্থ ও সবল থাকতে নিয়মিত এটি খান।
উপকরণ :
থানকুনি পাতা ১০০ গ্রাম বা ৩/৪ আটি, মধু ১ চামচ।
তৈরির পদ্বতি :
প্রথমে থানকুনি পাতা ভালভাবে ধুয়ে কুচি কুচি করে কেটে শিল পাটা বা ব্লেন্ডারে পিষে নিন। ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে রস বের করে নিন। এরপর রসের সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে গেল থানকুনি পাতার জুস।
থানকুনি পাতার বড়া:
উপকরণ :
থানকুনি পাতা ১০০ গ্রাম বা ৩/৪ আটি, পেঁয়াজ কুচি ২টি, রসুন কুচি ১টি, কাঁচামরিচ কুচি ২/৩টি, হলুদ ১ চামচ, মরিচ ১ চামচ, বেসন ১০০ গ্রাম, লবণ ও তেল পরিমাণমত।
তৈরির পদ্বতি :
থানকুনি পাতা ধুয়ে কুচি করে নিন। এবার থানকুনি পাতা কুচি, পেঁয়াজ, রসুন, হলুদ, বেসন ও লবণ একসাথে মিশিয়ে ভালভাবে মাখিয়ে নিবেন। পাত্রে তেল দিয়ে গরম করুন। বড়া বা পিঁয়াজুর মতো করে বানিয়ে গরম তেলে দিয়ে ভেজে পরিবেশন করুন।
থানকুনি পাতা ভাজি :
উপকরণ :
থানকুনি পাতা ১০০ গ্রাম বা ৩/৪ আটি, পেঁয়াজ কুচি ১টি, রসুন কুচি ১টি, কাঁচামরিচ কুচি ২/৩টি, লবণ ও তেল পরিমাণমত।
তৈরির পদ্বতি :
থানকুনি পাতা ধুয়ে কুচি করে নিন। পাত্রে তেল দিয়ে গরম করে পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচামরিচ দিয়ে নাড়ুন। কিছুক্ষণ পর থানকুনি পাতা কুচি ও লবণ দিয়ে নাড়তে থাকুন, ৫/৬ মিনিট পর নামিয়ে ফেলুন। হয়ে গেল থানকুনি পাতা ভাজি। স্বাদ বাড়াতে এই ভাজিতে আলু ও চিংড়ি যোগ করতে পারেন।
আলু ও থানকুনি পাতার ভর্তা:
উপকরণ :
থানকুনি পাতা ২০০ গ্রাম বা ২/৩ আটি, পেঁয়াজ কুচি ২টি, রসুন কুচি ১টি, কাঁচামরিচ ২/৩টি, আদা কুচি, আলু সেদ্ধ ১/২টি, লবণ ও সরিষার তেল পরিমাণমত।
তৈরির পদ্বতি :
প্রথমে থানকুনি পাতা ভালভাবে ধুয়ে নিন এরপর কুচি কুচি করে কেটে নিন। সেদ্ধ আলু গলিয়ে ভর্তা করুন। এর সঙ্গে থানকুনি পাতা কুচি, পেঁয়াজ কুচি, রসুন কুচি, আদা কুচি, লবণ মিশিয়ে নিন। তেল মিশিয়ে পরিবেশন করুন।
থানকুনি পাতার মিহি ভর্তা:
উপকরণ :
থানকুনি পাতা ২০০ গ্রাম বা ২/৩ আটি, পেঁয়াজ কুচি ২টি, রসুন কুচি ১টি, কাঁচামরিচ ২/৩টি, আদা কুচি, লবণ ও সরিষার তেল পরিমাণমত।
তৈরির পদ্বতি :
থানকুনি পাতা ভালো করে ধুয়ে কুচি কুচি করে কেটে নিন। এবার থানকুনির পাতা কুচি, পেঁয়াজ কুচি, রসুন, আদা, লবণ একসঙ্গে মিশিয়ে শিল পাটায় বা ব্লেন্ডারে পিষে নিন। এরপর তেল মিশিয়ে নিলেই হয়ে গেল থানকুনি পাতা ভর্তা।
থানকুনি পাতা খাওয়ার উপকারিতা:
এই থানকুনি পাতার রস থেকে আগে অনেক ওষুধও তৈরি হত। কিন্তু এখন এই পাতার দেখা আর প্রায় পাওয়াই যায় না। এমনকী এই প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা থানকুনি পাতা চেনেও না। কিন্তু শরীরকে নানা দিক দিয়ে সুস্থ রাখতে এই পাতার জুড়ি মেলা ভার। তবে শুধু আমাদের দেশেই নয়,খ্রিস্টপূর্ব ১৭ শতক থেকেই আফ্রিকা, জাভা, সুমাত্রাতেও ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয় এই পাতা।নিম্নে
- ক্ষত নিরাময়ে
- শরীরে রক্ত প্রবাহ ঠিক থাকে
- রক্ত জমাট বেঁধে যায় না
- শরীরের ভেতরের জ্বালা কমায়
- অলসারের নিরাময়ে
- মানসিক অবসাদ কমায়
- মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ে
- ঘুমের সমস্যা
- ডিটক্সিফিকেশন
থানকুনি পাতা খাওয়ার অপকারিতা :
প্রতিদিন এই পাতার রস খেতে পারলে অন্যরকম কোনও চিন্তা থাকবেই না।তবে এই পাতার যেমন উপকার রয়েছে তেমনি অতিরিক্ত খেলে এর অপকারিতা ও রয়েছে। যেমন –
- মারাত্মক পেটে যন্ত্রণা হতে পারে।
- মাথা ঘোরার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
- চুলকানি এবং অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন হওয়ার আশঙ্কাও থাকে।
- হঠাৎ করে রক্তচাপ কমে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।
- যাঁরা হেপাটাইটিস বা অন্য কোনও লিভারের রোগে ভুগছেন, তাঁদেরও থানকুনি পাতা খাওয়া উচিত নয় ।
- আগামী দু’সপ্তাহে যদি কোনও অপারেশন থাকে, তা হলেও থানকুনি পাতা এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।
আরো পড়ুন :বিতরের নামাজ পড়ার নিয়ম,নিয়ত ও হাদিস।
পরিশেষে :
বলা যাই যে,গ্রামে-গঞ্জে গত কয়েক বছর আগেও এই পাতার খুব কদর দেখা যেত । কিন্তু যত দিন গিয়েছে মানুষ ভুলতে বসেছে এই পাতার উপকারিতা। এমনকী অনেকে চেনেও না এই পাতা।আজ থেকে কয়েক বছর আগেও গ্রামের সব বাড়িতেই থাকত থানকুনি পাতার গাছ। পরবর্তীতে শহরতলির বেশ কিছু বাড়িতেও লাগানো হত এই গাছ। কারোর হাত কিংবা পা কেটে গেলে বা পেটের কোনও সমস্যা হলেই খোঁজ পড়ত থানকুনি পাতার। কোনও একটা ঘর থেকে নিশ্চিত পাওয়া যেতই। এমনকী প্রাচীন আর্য়ুবেদ শাস্ত্রেও এই পাতার প্রচুর গুণাগুণ বর্ণিত রয়েছে।