আসসালামু আলাইকুম আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই ভালো আছেন।  দলিল হচ্ছে জমি জমার সনদ পত্র বা প্রাণ । তাই যিনি জমি কিনছেন দলিলটি তার নিকট বোধগম্য হতে হবে। দলিলে যদি কোন ভুল থাকে তার দায় বহন করতে হয় জমি ক্রেতাকে। এজন্য যার হাতের লেখা সুন্দর তাকে দিয়ে অথবা  কম্পিউটারে টাইপ করে দলিল লেখা উচিত। জমির ক্রেতা ও নবীন দলিল লেখকদের দলিল লেখার সুবিধার্থে নিম্ন একটি আধুনিক দলিলের মডেল তুলে ধরা হলো। মডেল দলিলে দলিলের কোন অংশ যেন  বাদ না পড়ে সেজন্য দলিলকে ৯টি অংশে ভাগ করে ৯টি শিরোনাম দিয়ে লেখা হয়েছে। বাস্তবে দলিল লেখার সময় এ শিরোনামগুলো ব্যবহার করা যেতেও পারে, ব্যবহার না করলেও চলবে। তবে ৯টি অংশের কোনটিও যাতে বাদ না পড়ে সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।

আধুনিক দলিলের নমুনা:

একটি আধুনিক দলিলের নমুনা নিম্নে দেয়া হলো –

শিরোনাম : 

সাফ কবলা দলিল

বিক্রিত জমি ২০ (বিশ ), শতাংশ

বিক্রিত জমির মূল্য ১৫০.০০০/= ( এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা পক্ষ পরিচয়।

১ম পক্ষ : 

জনাব অনিক মিয়া, পিতা : মৃত আনোয়ার, মাতা- আমেনা বেগম, জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বব: ……………………… সাকিব : নন্দিগ্রাম, উপজেলা : বেলকুচি, জেলা- সিরাজগঞ্জ, জাতীয়তা : বাংলাদেশী, ধর্ম : ইসলাম পেশা:ব্যবসা…….দলিল গ্রহীতা।

২য় পক্ষ :

জনাব জাবালুর , পিতা : মৃত নজর আহমেদ, মাতা: জহুরা বেগম, জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর: ………………. সাকিন : উকিলপাড়া, উপজেলা : বেলকুচি, জেলা- সিরাজগঞ্জ, জাতীয়তা : বাংলাদেশী, ধর্ম : ইসলাম, পেশা : চাকুরী……….দলিল দাতা।

স্বত্বের বর্ণনা : 

পরম করুণাময় আল্লাহর নাম স্মরণে রেখে অত্র বিক্রয় দলিলের বর্ণনা শুরু করছি। নিম্ন তফসিল বর্ণিত ২০ (বিশ ) শতাংশ জমির সি এস রেকর্ডীয় মালিক মৃত নজর আহমেদের পুত্র এবং এস. এ. ট্রেডিং এর মালিক জাবালুরের  নিকট হতে আমি অত্র দলিল দাতা বিগত ১৫/৩/২০১১ ইং তারিখে সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে রেজিষ্ট্রিকৃত ১ নং বহির ১০ নং ভলিউমের ২১৫-২৪২ পৃষ্ঠায় লিখিত…. নং সাফ কবলা দলিল মূলে প্রাপ্ত হয়েছি। উক্ত জমি নামজারী মূলে আমার নিজ নামে ৪২৬ নং হোল্ডিং ভুক্ত হয়। যার উন্নয়ন কর হাল সন পর্যন্ত আমি পরিশোধ করে নির্বিবাদে ভোগ দখল করছি।

বিক্রয় বর্ণনা : 

নিম্ন তফসিল বর্ণিত জমি আমি সাফ বিক্রির ঘোষণা করলে আপনি দলিল গ্রহীতা তা ক্রয় করতে ইচ্ছুক হওয়ায় পরস্পর আলোচনাস্তে জমির বর্তমান বাজার যাচাই করে সর্ব্বোচ্চ মূল্য মং ১,৫০,০০০/- (একলক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা সাব্যস্ত করত সাব্যস্তকৃত সাকুল্য টাকা অদ্য হাজিরান মসলিজেসের মোকাবেলায় নগদ বুঝে পেয়ে ও নিয়ে অত্র সাফ বিক্রয় দলিল সম্পাদন ও কটিয়াদী সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে দাখিল দিয়ে আমি দলিল দাতা চিরতের নিঃস্বত্ববান হলাম এবং বিক্রিত জমির দখল অদ্যই আপনার নিকট বুঝিয়া দিলাম।

অদ্য হতে এ দলিল বিক্রিত জমিতে আমার যাবতীয় স্বত্বে স্বত্ববান ও মালিক দখলদার নিয়ত থেকে আমার নামের খারিজে আপনার নামজারী করত আপনার সদইচ্ছাভাবে আপনি ও আপনার ওয়ারিশগণ বিক্রয়/হস্তান্তরের অধিকারসহ ভোগ দখল করতে থাকবেন । এত আমার বা আমার উত্তরাধিকারীগণের কারো কোন প্রকার ওজর আপত্তি বা দাবী চলিবে না।

নিস্কন্টকতার অঙ্গীকার : 

অত্র দলিলের তফসিলভুক্ত জমি আমি ইতোপূর্বে কারো নিকট দান, উইল, রেহান বা বিক্রি মূলে হস্তান্তর করি নাই । কোন ব্যাংক বা কোন প্রতিষ্ঠানের নিকট দায়বদ্ধ রাখি নাই । অন্য কারো নিকট হতে বায়না গ্রহণ করি নাই । নিম্ন তফসিল বর্ণিত জমি আমি সম্পূর্ণ নির্ধায়ী, নিস্কন্টক অবস্থায় আপনার নিকট বিক্রি করলাম।

অত্র দলিলের খতিয়ান দাগ, চৌহদ্দি বয়ানে বা কোন প্রকার ভুল ভ্রান্তিতে আপনার বৈধ স্বত্ব সংরক্ষণে বা যে কোন প্রয়োজনে আমি “ভ্রম সংশোধন দলিল” সম্পাদনসহ সকল রকম সহযোগিতা করবো। এ জমির বিষয়ে ভবিষ্যতে কোন তঞ্চকতা প্রকাশ পেলে আমি আইনগত ভাবে দায়ী থাকবো।

তফসিল বর্ণনা : 

জেলা- রাজশাহী , উপজেলা ও সাব-রেজিষ্ট্রি বেলকুচি, মৌজাস্থিত : …. অর্থাৎ দুই দাগে বিক্রিত জমি (১০ + ১০) = ২০ (ছাব্বিশ) শতাংশ। বিক্রিত জমির ভৃঃ ইঃ কর তহসিলদার উকিলপাড়া বরাবরে প্রদেয়।

চৌহদ্দি বর্ণনা : 

বিক্রিত জমির উত্তরে আয়মন নেসা, পূর্বে আ: জলিল, দক্ষিণে, বিক্রেতা ছাবেদ ও পশ্চিমে তমিজ উদ্দিন। এ চৌহদ্দির মধ্যে বিক্রিত ২০ (ছাব্বিশ) শতাংশ জমি।

সম্পাদনা : 

এতদ্বার্থে স্বেচ্ছায়, স্বজ্ঞানে, সুস্থ শরীরে অন্যের বিনা প্ররোচনায় অত্র সাফ কবলা দলিল লিখিয়ে, পাঠ করে ও এর মর্ম অবগত হয়ে সম্পাদন সহি দিলাম।

ইতি 

তারিখ বাংলা…… সনের……, আষাঢ়, ইংরেজী…… সনের……. জুন, সময় সকাল ১০.৩০ মিনিট। অত্র দলিলে হলফনামাসহ ফর্দ সংখ্যা ৬ (ছয়), দলিল কম্পিউটারের টাইপকৃত। দাতা ১ (এক) জন, গ্রহীতা ১ (এক) জন, সাক্ষী ২ (দুই) জন, সনাক্তকারী ১ (এক) জন।

স্বাক্ষর : 

মুসাবিদা কারক নাম : ………. দাতার নামসহ স্বাক্ষর………, এস. আর. অফিস :……….. দলিল লেখার সনদ নং: ……….সাক্ষীগণের স্বাক্ষর (১)…..(২)……স্পষ্ট অক্ষরে সনাক্তকারীর নাম………, পিতার নাম……… সাকিন……।

আরো পড়ুন :জমির অংশ বের করার নিয়ম বিভিন্ন পদ্ধতিতে।

পরিশেষে :

বলা যাই যে  দলিল যেহেতু জমির মালিকানা দাবি বহন করে থাকে । তাই জমির দলিলের লেখা শুদ্ধ ও পরিচ্ছন্ন হওয়া বাঞ্ছনীয়। বর্তমানে আধুনিক পদ্ধতিতে দলিল লেখাই সকলের জন্য বোধগম্য বা ভালো ।

Write A Comment