আসসালামু আলাইকুম আশা করছি আল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই ভালো আছেন। ঘুমের মধ্যে অনেক মানুষ নাক ডাকেন । একটু আধটু নাক ডাকলে তেমন কোনো সমস্যা নেই। তবে অনেকের নাক ডাকাতে পাশের শুয়ে থাকা অন্য মানুষ ঘুমাতে পারেন না। রাতের নীরবতা ভেঙে একটানা অথবা থেমে থেমে বিচিত্র স্বরে ডেকে যাচ্ছে। শব্দ কখনো বাড়ছে কখনোবা কমছে। পাশের ঘরে হলে না হয় দরজা-জানালা বন্ধ করে, হালকা শব্দে গান ছেড়ে কোনো না-কোনোভাবে বাঁচা যায়  । কিন্তু নাক ডাকেন এমন কারও সঙ্গে একই বিছানায় ঘুমাতে হলে, হায় হায় রাতের ঘুমের একেবারে শেষ। কিন্তু যিনি নাক ডাকেন, তাঁর কী হাল হয়?

চিকিৎসকের মতে , নাক ডাকা অন্য অনেক স্বাস্থ্য সমস্যার পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ এমনকি স্ট্রোকের ঝুঁকির আলামতও হতে পারে। লন্ডনের দ্য প্রাইভেট ক্লিনিকের নাক-কান-গলারোগ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ শল্য চিকিৎসক নাক ডাকার কিছু  কারণ ও এর প্রতিকার সম্পর্কে জানিয়েছেন।

নাক ডাকার কারণ:

বেশ কিছু কারণে নাক ডাকার সমস্যা হতে পারে। যেমন –

  • নাকে মাংস বৃদ্ধির হলে নাকের নালি ছোট হয়ে শ্বাসে বাধার সৃষ্টি করে এর ফলে নাক ডাকে ।
  • শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গলার চারপাশে চর্বি জমা হয় ফলে কমে যায় গলার পেশির নমনীয়তা হয় । তখন নাক ডাকার সমস্যা হতে পারে।
  • জন্মগত কারণে শ্বাসযন্ত্র সরু হলে বা চোয়ালে কোনও সমস্যা থাকলে নাকডাকতে পারে।
  • ধূমপান বা  অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে নাক ডাকার সমস্যা হতে পারে।
  • থাইরয়েডের সমস্যা ও গ্রোথ হরমোনের আধিক্যজনিত রোগেও নাক ডাকতে পারে।
  • অনেক সময় চিত হয়ে ঘুমোলে জিভ পিছনে চলে গিয়ে শ্বাসনালি বন্ধ করে দেয়। এর ফলে তখন নাক ডাকতে পারে ।

নাক ডাকা থেকে মুক্তির কয়েকটি উপায়:

বেশ কিছু অভ্যাস পরিবর্তন করলে আমরা নাক ডাকা থেকে মুক্তিপেতে পারি। নিম্নে দেয়া হলো –

(১)ঘুমেরে ভঙ্গি বদলান:

প্রথমেই আপনার ঘুমের অবস্থান পরিবর্তন করুন। যারা চিৎ হয়ে ঘুমান, তাদের জিহ্বা এবং গলার নরম তালু শুকিয়ে গিয়ে ঘুমের সময় কম্পনের শব্দ সৃষ্টি করে। এর ফলে নাক ডাকার শব্দ বেড়ে যায়। এজন্য চিৎ হয়ে শোয়া এড়িয়ে বরং যেকোনো দিকে কাঁত হয়ে ঘুমানোর অভ্যাস গড়ুন।

(২)অতিরিক্ত ওজন কমান:

যারা অতিরিক্ত ওজনে ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রেও ঘুমের মধ্যে নাক ডাকার প্রবণতা 

বেশি লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে ঘাড় ও গলায় বেশি চর্বি জমলে এ সমস্যাটি বেড়ে যায়। কারণ এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ঘুমের সময় গলার অভ্যন্তরীণ ব্যাস সংকীর্ণ হয়ে আসে। এর ফলে নাক ডাকা শুরু হয়।

(৩) মদ্যপানকে না বলুন:

যারা নিয়মিত মদ্যপান করেন, তাদের গলার পিছনের পেশির স্বর কমে আসে। যার ফলে আপনি নাক ডাকতে পারেন। বিশেষ করে ঘুমানোর ৪-৫ ঘণ্টা আগে অ্যালকোহল পান করলে নাক ডাকার সমস্যা আরও বেড়ে যায়। তাই রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অ্যালকোহল পান থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে এই সমস্যা দূর করার চেষ্টা চালানো যেতে পারে।

(৪)ধূমপান ছাড়তে হবে:

ধূমপান থেকে টারবাইনেটস নামে নাকের বিশেষ এক ধরনের টিস্যু স্ফীত হয়ে যেতে পারে এবং এ থেকেও শ্বাস-প্রশ্বাসের জটিলতা সৃষ্টি হয়। ধূমপানের এই দুই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণেই নাক ডাকার সমস্যা হতে পারে। ধূমপানের বদ-অভ্যাস ত্যাগ করতে পারলে তা আপনার সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়ক হবে।

(৫)ভালো ও গভীর ঘুম:

ভালো ও গভীর ঘুম হলে নাক ডাকার সমস্যাও কমে যায়। পর্যাপ্ত ঘুম ছাড়া দীর্ঘ সময় কাজ করা ও অতিরিক্ত ক্লান্ত হয়ে যখন কেউ ঘুমিয়ে পড়ে, তখন মুখে ও গলার পেশীগুলো ফ্লপপিয়ার হয়ে যায়। যা নাক ডাকার সৃষ্টি করে।এ জন্য ভালো ও গভীর ঘুম দরকার। 

(৬)সর্দি লাগার জন্য :

অনেক সময় সর্দি লাগার কারণে নাক বন্ধ হয়ে থাকলে, নাক ডাকা শুরু হয়। এজন্য নাসারন্ধ্র খোলা রাখতে ভাঁপ গ্রহণ করুন। মেন্থল ব্যবহারেও দ্রুত নাক খুলে যাবে সর্দি লাগলে।

(৬)বিছানা ও বালিশ পরিষ্কার রাখুন

আপনার বালিশ পরিবর্তন করার মাধ্যমেও নাক ডাকার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। অনেক সময় বালিশে বিদ্যমান অ্যালার্জেন নাক ডাকার কারণ হতে পারে। কারণ বালিশে সহজেই ধুলাবালি জমা হয় এবং অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এ কারণে বিছানা ও বালিশের কভারটি পরিষ্কার রাখুন।

(৭)জৈবিক কারণ খুঁজুন

চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুসারে নাক ডাকার তিনটি প্রধান জৈবিক কারণ আছে। নাকের নালিতে পুরু নরম প্রলেপ থাকা, অন্য কোনো কারণে নাকের নালি আংশিক সংকুচিত থাকা এবং জিহ্বার পেছনে বায়ুপথ সংকুচিত থাকা। আসল কারণ খুঁজে বের করতে না পারলে এ থেকে নিস্তার পাবেন না। একজন সাধারণ চিকিত্সক যদি এ বিষয়ে সাহায্য করতে না পারেন, তাহলে নাক-কান-গলারোগ বিশেষজ্ঞ দেখিয়ে পরামর্শ নিন।

নাক ডাকা থেকে মুক্তির ঘরোয়া টোটকা :

(১)আদা চা :

 আদা চা নিয়মিত খাওয়া শুরু করলে শরীরে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানের মাত্রা বাড়তে শুরু করে।  যার প্রভাবে ন্যাজাল ক্যাভিটি খুলতে শুরু করে। ফলে নাক ডাকার প্রকোপ কমতে সময় লাগে না।

(২)রসুন

নিয়মিত ১-২টি রসুনের কোয়া চিবিয়ে, এক গ্লাস পানি খেয়ে শুতে যেতে হবে। তাহলেই দেখবেন নাক ডাকা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

নাক ডাকার সমস্যা কমাতে ঘিয়ের কোনো বিকল্প হয় না বললেই চলে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে

(৩)ঘি

নাক ডাকার সমস্যা কমাতে ঘিয়ের কোনো বিকল্প হয় না বললেই চলে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে ,অল্প পরিমাণ ঘি গরম করে তার থেকে ২-৩ ড্রপ করে নিয়ে  নিয়মিত যদি নাকে দেয়া যায়, তাহলে নাক ডাকা থামতে একেবারেই সময় লাগে না। ঘিয়ে উপস্থিত বেশ কিছু উপকারি উপাদান নাকের ভেতরে বায়ু-চলাচলের পথকে খোলা রাখতে সাহায্য করে। ফলে নাক ডাকার প্রবণতা একেবারে কমে যায়।

(৪)এলাচ চা

নিয়মিত ঘুমানোর আগে এলাচ চা খেলে দারুণ উপকার মেলে। কারণ এই প্রকৃতিক উপাদানটিতে উপস্থিত একাধিক উপাকারী উপাদান নাকের ভিতরের বাঁধা সরিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক করতে বিশেষ ভূমিকা নেয়।

(৫)মধু 

এক গ্লাস গরম পানিতে ১ চামচ মধু মিশিয়ে ঘুমাতে যাওয়ার আগে নিয়ম করে যদি খেতে পারেন, তাহলে নাকা ডাকার সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার সুযোগই পাবে না। কারণ মধুতে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটারি উপাদান গলার প্রদাহ কমায়। সেই সঙ্গে শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক করে তোলে।

আরো পড়ুন :ত্বক কলো হওয়ার কারণ ও কালো থেকে ফর্সা হওয়ার উপায়

পরিশেষে :

বলা যাই যে ,বিকট নাক ডাকার আওয়াজ খুবই বিরক্তিকর।আশা করছে উপরোক্ত উপায় গুলো আপনাদের কাজে লাগবে। এছাড়া নানা ধরনের বুদ্ধি-পরামর্শ চেষ্টা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গিয়ে থাকলে কোনো কিছু তে কাজ না হলে এবার স্থায়ী সমাধানের দিকে এগোন। একজন নাক-কান-গলারোগ সার্জনের কাছে যান এবং  চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলুন। 

Write A Comment