আসসালামু আলাইকুম আশা করি আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। আমাদের খাওয়া দাওয়ার অনিয়ম ও ব্যস্ত লাইফ স্টাইলের অভ্যাস , দীর্ঘ সময় বসে বসে কাজ করা এবং দৈহিক পরিশ্রম কম হওয়ার কারণে পেটে মেদ জমতে থাকে। 

জাঙ্কফুডের বদঅভ্যাস ও খাওয়ার অনিয়মে পেটে বাড়ছে বাজে ফ্যাট। যাতে সৃষ্টি হচ্ছে নানা রোগের। তা নিয়েই বিপদে পড়ে থাকেন অনেকেই । বিশেষ করে সারা শরীরের তুলনায় পেটে মেদ জমে বেশি।  অত্যান্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে পেটের মেদ কমানো যেমন পরিশ্রমসাধ্য তেমনি সময়সাপেক্ষও।

আমরা ওজন কমানোর জন্য অনেকেই বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকি । এর মধ্যে আছে  না খেয়ে থাকা,ওজন বৃদ্ধি পায় এমন খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, ব্যায়াম এবং মেডিকেশন। তবে কখনোই না খেয়ে থাকা ঠিক না।  কারণ না খেয়ে থাকলে তাতে ওজন কমে না বরং আরো ও শরীরের ক্ষতি হয় ।

 এই আর্টিকেলে  মেদ কমানোর উপযোগী কতিপয় এলোপ্যাথি ও আয়ুর্বেদিক ওষুধএবং কিছু ঘরোয়া উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো। তবে এটা কোনো চিকিৎসামূলক পোস্ট নয়। তাই নিম্নলিখিত যে কোনো ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত সেবনকরা উচিত হবে না ।

পেটের মেদ কমাতে এলোপ্যাথি উপায় :

এলোপ্যাথি ওষধের মাধ্যমে মেদ কমানো সম্ভব। এই ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা নেই তবে এসব ওষুধ দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের জন্যও নিরাপদ নয়।

অরলিসট্যাট গ্রূপ এর  ওষুধ বাজারে 60 মিগ্রা ও 120 মিগ্রা  দুটি ওষুধ পাওয়া যায় যা চর্বি পরিপাক ও শোষণে বাধা দেয় এবং যা শুধুমাত্র পরিপাক তন্ত্রেই সক্রিয় করে মাংস নয় বরং চর্বি কমিয়েই শরীরের ওজন কমাতে সক্ষম হয় । এটি রক্তে উচ্চ মাত্রার চর্বি ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে।তবে এই ধরনের ওষুধ  নিজে নিজে ব্যবহারকরা উচিত নয়  কারণ অতিদ্রুত ওজন হ্রাস বা বৃদ্ধি কোনটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য কাম্য নয়। অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এ ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা উচিত।  তবে এর  পাশাপাশি দৈহিক শ্রম ও ব্যায়াম আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে আরও সাহায্য করবে। আপনি প্রতিদিন খাবারের সাথে যে চর্বি খাচ্ছেন এই ওষুধ তার এক তৃতীয়াংশকে হজমে বাধা দেয়।  নিচে কিছু ওষুধের নাম ও কোম্পানিনের নাম দেয়া হলো –

(১)অ্যাডিপোনিল – ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালস লিঃ

(২) ডায়েটিল – এস্কেফ (SK+F) বাংলাদেশ লিঃ

(৩) লোয়েট  – Albion ফার্মাসিউটিক্যালস লিঃ

(৪)Olistat – স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিঃ  

(৫) অরলিফিট – অপসোনিন ফার্মা লিঃ 

(৬)Ornical – এ সি ই লিঃ 

(৭)স্লিমফাস্ট – হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিঃ 

পেটের মেদ কমাতে আয়ুর্বেদিক উপায় :

এলোপ্যাথি উপায়ের যেমন মেদ কমানো সম্ভব তেমনি আয়ুর্বেদিক উপায়ে ও পেটের মেদ কমানো সম্ভব।  আয়ুর্বেদিক বেশ কিছু ওষুধ আছে যা পেটের মেদ কমাতে কার্যকারি। আর এই ওষুধের পার্শপ্রতিক্রিয়ার নেই বললে চলে তবে ডাক্তারের পরমর্শ ছাড়া এইসব ওষুধ খাওয়া উচিত না। নিচে কিছু ওষুধ ওকোম্পানির নাম দেয়া হলো –

(১)লোফ্যাট (বড়বাগ্নি রস)-এবি ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু), ঢাকা, বাংলাদেশ।

(২)হাল্যাক্স (তিনকার-হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ (ওয়াকফ) বাংলাদেশ।

(৩)ফ্যাট রিডিউসার (হাব্বে তিনকার)-মার্কো ইউনানী ফার্মা (মডার্ন হারবাল ফুড লিঃ), ঢাকা, বাংলাদেশ।

(৪)স্লিফিট (কুরছ মুহাযযিল)-হামজা ল্যাবরেটরীজ, ভাটারা, ঢাকা, বাংলাদেশ।

(৫)স্লিমোরেক্স (কুরছ মুহাযযিল)-ইউনিড্রাগ ইউনানী ল্যাবরেটরীজ, ঢাকা, বাংলাদেশ।

(৬)কৃশক্যাপ-জেবিএল ড্রাগ ল্যাবরেটরীজ, গাজীপুর, বাংলাদেশ।

পেটের মেদ কমাতে ব্যায়াম ঘরোয়া উপায় :

পেটের অতিরিক্ত মেদ বা ভুঁড়ি  সকলের জন্য একটি অস্বস্তিকর বিষয়। ছোট ছোট অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসের কারণে আমাদের পেটে মেদ জমে। পেট ছাড়াও এই অভ্যাসগুলো শরীরের অন্যান্য স্থানে মেদ জমার অন্যতম কারণ । পেটের মেদ দ্রুত কমাতে সাহায্য করবে এমন ১০টি অভ্যাস নিয়ে এখন  আলোচনা করবো। 

এই অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলো এড়ানো গেলে শুধুমাত্র পেটের মেদ নয়, বরং কোমরের মেদ, মুখের চর্বি, উরুর মেদ, নিতম্বের মেদ কমানো সম্ভব হবে।

(১)দ্রুত খাওয়ার অভ্যাস বাদ দিন। 

(২)কোনো বেলার খাবার বাদ দিবেন না। 

(৩)বড় প্লেটের বদলে ছোট প্লেট বেছে নিন। 

(৪)সৌজন্যবোধ থেকে বেশি খাবেন না.

(৫)আনমনে খাওয়া পরিহার করুন।

(৬)মানসিক চাপ মোকাবেলা করুন।

(৭)অস্বাস্থ্যকর ঘুমের রুটিন বদলে ফেলুন।

(৮)সাদা চাল, সাদা আটার বিকল্প বেছে নিন.

(৯)খাওয়ার আগে মোড়ক যাচাই করে নিন

(১০)শুয়ে বসে না থেকে অ্যাকটিভ হোন.

(১১)ব্যায়াম এর  অভ্যাস করুন। 

নিম্নে কিছু ঘরোয়া উপায় দেয়া হলো –

ঘারুয়া এই উপায় গুলো আমরা কয়েকটি ধাপে অবলম্বন করতে পারি। 

১ম ধাপ: 

সর্ব প্রথম পেটের মেদ কমানোর জন্য কাজ হচ্ছে যোগা-ব্যায়াম। শুধু পেটের ব্যায়ামই নয়, পুরো শরীরের ব্যায়াম  করতে হবে। পুশ-আপ, পুল-আপ করতে হবে এবং দড়িলাফ করতে পারলে সব চাইতে ভালো। ১ সপ্তাহে পেটের মেদ কমাতে চাইলে প্রতিদিনের ব্যায়ামে আপনাকে ৫০০ থেকে ৬০০ ক্যালোরির মতো ক্ষয় করতে হবে।

২য় ধাপ:

 দিন শুরুতেই  পাতিলেবু ও জল। প্রতিদিন সকাল বেলা নিয়ম করে ১ গ্লাস লেবু ও গরম জল খান। লেবুর রসের পরিমান বেশি রাখার চেষ্টা করুন। সকালের ব্রেক ফাস্টের আগে কোনও একটা ফল বা অনেকটা জল খান। মনে রাখবেন, জল মেদ ঝড়াতে মোক্ষম ওষুধ। এছাড়া খাবারের চাহিদা কমে যাবে। দিনে প্রচুর পরিমাণ জল খান।

৩য় ধাপ:

প্রতিদিন খাবারে টক দই রাখুন।  টক দই খাওয়ার ফলে এর প্রোবায়োটিকস উপাদান কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। দইয়ে থাকা স্বাস্থ্যকর ব্যাক্টেরিয়া আমাদের হজমে সাহায্য করে। এছাড়া টক দেই কোমর ও পেটের মেদ কমাতেও সাহায্য করে।

 ৪র্থ ধাপ:

গ্রিন-টিতে আছে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, যা পেটের মেদ কমাতে খুব বেশি কার্যকর। তাই দুধ ও চিনি বেশি দিয়ে চা পানের অভ্যাস বাদ দিন। চিনি ছাড়া নিন গ্রিন-টি খাবার অভ্যাস করুন।

৫ম ধাপ:

বেশি মশলাযুক্ত খাবারে পরিহার করুন।  শুধু দারচিনি, গোলমরিচ ও আদা এইসব মশলা পেটের মেদ দূর করতে সাহায্য করে। আদার রস খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন এতে শুধু মেদই নয়, সর্দি-কাশি ও নানা ধরমের রোগ সেরে যায়। 

৬ষ্ট  ধাপ:

ফাইবার যুক্ত খাবার খাওয়া। যেমন—লাল চাল বা লাল আটার তৈরি খাবার এবং শাকসবজি ও ফলমূলজাতীয় খাবারে মিলবে আঁশ।এছাড়া আখরোট, কাঠবাদাম ও সামুদ্রিক মাছ, ইতাদি ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের উৎস। তাই এসব খাবার পেটের মেদ কমাতে কার্যকর।

আরো পড়ুন :ছেলেদের মাথায় খুশকির কারণ এবং দূর করার উপায়।

পরিশেষে :

বলা যাই যে , এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি পেটের মেদ কমানোর উপায় গুলোর ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারণা পাবেন। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন এই পরামর্শগুলো পেটের মেদ কমানোর পাশাপাশি কোমরের মেদ, উরুর মেদ, নিতম্বের মেদ ও মুখের চর্বি কমাতেও সাহায্য করবে।তবে এলোপ্যাথি ও আয়ুর্বেদিক ওষুধএর চেয়ে নিয়মিত ব্যায়াম ও ঘরোয়া উপায় মেনে চলা উচিত। কারণ এতে কোনো পার্শপ্রতিক্রিয়া নেই। 

 

Write A Comment