আমরা সবাই জানি ত্বক ভালো রাখার জন্য ক্লিনজিং, টোনিং ও ময়েশ্চারাইজিং গুরুত্বপূর্ণ। ত্বক সুস্থ রাখার প্রথম ধাপই হচ্ছে ত্বক পরিষ্কার রাখা। ত্বক যেমনই হোক না কেন তা পরিষ্কার রাখা ভীষণ জরুরি। অনেকে মনে করেন ঘরে থাকলে ত্বক পরিষ্কারের বিশেষ প্রয়োজন নেই। কারণ বাইরের মতো ধুলা তো আর ঘরে নেই। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে একবার ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নেওয়া ভালো। কারণ ঘুমোনোর সময় ত্বকের গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত তেল-সেবাম জমে থাকে মুখে। সকালে উঠে শুধু পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেললে এই তেল পুরোপুরি পরিষ্কার হয় না।তবে তাই বলে অতিরিক্ত ফেসওয়াশ ব্যবহার করতে যাবেন না। ফেসওয়াশে থাকা বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান ত্বকের পিএইচের ভারসাম্য নষ্ট করে দিতে পারে।তাছাড়া বাইরে বের হওয়ার আগে অনেকেই মুখে মেকআপ করেন। মেকআপ ত্বকে ভালো করে বসার জন্যও ত্বক পরিষ্কার হওয়া জরুরি।আবার দিনশেষে বাড়ি ফিরে ফেসওয়াশ তো ব্যবহার করতেই হবে। এতে ত্বকে জমে থাকা ধুলা ও মেকআপ পরিষ্কার হবে। 

ফেসওয়াশ আমাদের দৈনন্দিন স্কিন কেয়ার রুটিনের একটি অপরিহার্য অংশ। এটি ত্বকের ময়লা, তেল এবং অন্যান্য অমেধ্য দূর করতে সাহায্য করে এবং ত্বককে সতেজ ও উজ্জ্বল রাখে। তবে, ফেসওয়াশ ব্যবহারের সঠিক নিয়ম এবং উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই সঠিক ধারণা রাখেন না। তাই  এখন ফেসওয়াশ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

ফেসওয়াশ:

ফেসওয়াশ হলো একটি স্কিন কেয়ার পণ্য যা মুখের ত্বক পরিষ্কার করতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে । এটি সাধারণত ত্বকের পৃষ্ঠ থেকে ময়লা, তেল, মেকআপ এবং অন্যান্য অমেধ্য দূর করতে সাহায্য করে। ফেসওয়াশ বিভিন্ন ধরনের আকারে পাওয়া যায়, যেমন জেল, ফোম, ক্রিম এবং স্ক্রাব ফেসওয়াশ ।

ফেসওয়াশ ব্যবহারের নিয়ম:

দৈনন্দিন ত্বকের যত্নে মুখ পরিষ্কার রাখা অত্যান্ত প্রয়োজন। ত্বকের যত্নে বা মুখ পরিষ্কার করতে ফেসওয়াশ ব্যবহার করা হয়। কারণ, ক্লিনজিং বা সাবানের চেয়ে ফেসওয়াশ ব্যবহার করা সহজ হয় । মেকাআপ করা অবস্থায় বা এমনিতেও সারাদিন বাহিরের  ধূলাবালি থেকে এসে মুখ ধোয়া জরুরি।

আমাদের দেশে আবহাওয়া প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হতে থাকে। গরম এবং শীতেকালে আমাদের স্কিনে ভিন্ন ভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। যা ফেসওয়াশ ব্যবহারের মাধ্যমে তা অনেকটাই সমাধান করা সম্ভব হয় । ফেসওয়াশ শুধু ত্বক পরিষ্কার করে না আমাদের ত্বকের ছিদ্র গুলোতে লুকিয়ে থাকা ময়লাও পরিষ্কার করে। ফেসওয়াশ ত্বককে গভীরভাবে পরিষ্কার করতে সাহায্য করবে।

মেকাআপ বা ধূলাবালি কারণে স্কিন চুলকানো ও ব্রণের সমস্যা দেখা দেয়। যা ফেসওয়াশ ব্যবহারে মধ্যমে ত্বক জীবাণু মুক্ত ও ময়লা থেকে সুরক্ষিত করে থাকে । ফেসওয়াশ ব্যবহারে ত্বককে মৃসণ ও উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে।

তবে ফেসওয়াশ ব্যবহারের সঠিক নিয়ম মেনে চলা খুবই জরুরি। সঠিক নিয়ম মেনে চললে ত্বক  পরিষ্কার ও সুস্থ থাকবে। নিচে ফেসওয়াশ ব্যবহারের কিছু নিয়ম দেওয়া হল-

(১)পরিচ্ছন্ন হাত: ফেসওয়াশ ব্যবহার করার আগে হাত ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে ।

(২)উষ্ণ পানি ব্যবহার: মুখ ধোয়ার জন্য উষ্ণ পানি ব্যবহার করুন। এটি ত্বকের পোরগুলো খুলে দেয় এবং ফেসওয়াশকে ভালোভাবে কাজ করতে সাহায্য করে থাকে ।

(৩)ফেসওয়াশ প্রয়োগ: মুখে অল্প পরিমাণে ফেসওয়াশ নিয়ে হালকাভাবে ম্যাসাজ করুন। ত্বকের সার্কুলার মুভমেন্টে ম্যাসাজ করুন যাতে ফেসওয়াশ ত্বকের গভীরে প্রবেশ করতে পারে।

(৪)পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন: মুখে ফেসওয়াশ প্রয়োগের পর উষ্ণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এবং পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে নিন।

(৫)ময়শ্চারাইজার ব্যবহার: ফেসওয়াশ ব্যবহারের পর ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করুন। এটি ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং ত্বককে নরম ও মসৃণ করে।

ফেসওয়াশ ব্যবহারের উপকারিতা:

ফেসওয়াশ ব্যবহারে ত্বকের অনেক উপকারিতা রয়েছে। এর কিছু প্রধান উপকারিতা নিচে দেওয়া হল-

  • ময়লা ও তেল দূর করে: ফেসওয়াশ ত্বকের পৃষ্ঠ থেকে ময়লা ও তেল দূর করে এবং ত্বককে পরিষ্কার রাখে।
  • মেকআপ রিমুভাল: ফেসওয়াশ ত্বক থেকে মেকআপ দূর করতে সাহায্য করে এবং ত্বককে সতেজ করে তোলে ।
  • পোর পরিষ্কার রাখা: ফেসওয়াশ ত্বকের পোরগুলো পরিষ্কার রাখে এবং ব্রণ ও অন্যান্য ত্বকের সমস্যার ঝুঁকি কমায়।
  • ত্বকের পিএইচ লেভেল বজায় রাখা: ফেসওয়াশ ত্বকের প্রাকৃতিক পিএইচ লেভেল বজায় রাখতে সাহায্য করে থাকে ।
  • হাইড্রেশন: কিছু ফেসওয়াশ ত্বককে হাইড্রেট করে এবং ত্বকের শুষ্কতা কমায়।

স্কিন ধরণ অনুযায়ী ফেসওয়াশ:

ত্বকের ধরন অনুযায়ী সঠিক ফেসওয়াশ নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন ত্বকের ধরন অনুযায়ী ফেসওয়াশের ব্যাবহার –

  • তৈলাক্ত ত্বক: তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ফোমিং বা জেল ফেসওয়াশ সবচেয়ে উপযুক্ত। এগুলি ত্বকের অতিরিক্ত তেল শোষণ করে এবং ত্বককে মসৃণ রাখে। 
  • শুষ্ক ত্বক: শুষ্ক ত্বকের জন্য ক্রিম বা মিল্ক ফেসওয়াশ সবচেয়ে উপযুক্ত। এগুলি ত্বককে হাইড্রেট করে এবং ত্বকের শুষ্কতা কমায়। 
  • মিশ্র ত্বক: মিশ্র ত্বকের জন্য জেল বা ক্রিম ফেসওয়াশ সবচেয়ে উপযুক্ত। এগুলি ত্বকের তেল ও ময়শ্চারাইজার ব্যালান্স বজায় রাখে। 
  • সেনসিটিভ ত্বক: সেনসিটিভ ত্বকের জন্য হাইপোঅ্যালার্জেনিক এবং ফ্র্যাগ্র্যান্স-ফ্রি ফেসওয়াশ সবচেয়ে উপযুক্ত। এগুলি ত্বকের এলার্জি ও জ্বালাপোড়া কমায়। 

ফেসওয়াশ ব্যবহারের সতর্কতা:

ফেসওয়াশ ব্যবহারের সময় কিছু সতর্কতা মেনে চলা জরুরি। নিচে ফেসওয়াশ ব্যবহারের কিছু সতর্কতা দেওয়া হল-

অতিরিক্ত ব্যবহার করবেন না: ফেসওয়াশ অতিরিক্ত ব্যবহার করলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। প্রতিদিন ২ -৩ বার ফেসওয়াশ ব্যবহার করুন।

  • কেমিক্যাল মুক্ত পণ্য ব্যবহার করুন: ফেসওয়াশ নির্বাচন করার সময় কেমিক্যাল মুক্ত এবং প্রাকৃতিক উপাদান সমৃদ্ধ পণ্য ব্যবহার করুন।
  • মৃদু ম্যাসাজ করুন: ফেসওয়াশ প্রয়োগের সময় ত্বকে মৃদু ম্যাসাজ করুন। বেশি জোরে ম্যাসাজ করলে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।
  • তাড়াতাড়ি মুখ ধুয়ে ফেলুন: ফেসওয়াশ ত্বকে বেশি সময় ধরে রাখবেন না। তাড়াতাড়ি মুখ ধুয়ে ফেলুন যাতে ত্বকের শুষ্কতা না হয়।

কিছু ভালো ফেসওয়াশের নাম :

ফেসওয়াশের ভালোমন্দ নির্ভর করে ত্বকের ধরন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী। তবে কিছু জনপ্রিয় এবং কার্যকর ফেসওয়াশের তালিকা নিচে দেওয়া হল:

  • ক্যাপিলিনো টারমারিক ফেসিয়াল ক্লিনজার: তৈলাক্ত ত্বকের জন্য অত্যন্ত কার্যকর।
  • ডাভ ডিপ ময়শ্চারাইজিং ফেসওয়াশ: শুষ্ক ত্বকের জন্য এটি উপযুক্ত।
  • গার্নিয়ার পিউর এক্টিভ ফেসওয়াশ: মিশ্র ত্বকের জন্য আদর্শ।
  • সেটাফিল জেন্টল স্কিন ক্লেনজার: সেনসিটিভ ত্বকের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত।
  • হিমালয়া হার্বালস নিম ফেসওয়াশ: প্রাকৃতিক উপাদান সমৃদ্ধ এবং সব ধরনের ত্বকের জন্য উপযুক্ত।
  • ফেসওয়াশ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্কিন কেয়ার পণ্য যা ত্বকের ময়লা, তেল এবং মেকআপ দূর করে ত্বককে পরিষ্কার ও সতেজ রাখে। সঠিক ফেসওয়াশ নির্বাচন এবং ব্যবহারের নিয়ম মেনে চললে ত্বক সুস্থ ও উজ্জ্বল থাকবে।

আরো পড়ুন :উপস্থিত বক্তব্য শুরু করার নিয়ম।

পরিশেষে :

বলা যাই যে ,ত্বক ভাল রাখতে রোজ সালোঁয় যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। সাধারণ কিছু পরিচর্যা বাড়িতেই করা যায়।। ত্বক যেমনই হোক, তা পরিষ্কার রাখতে পারলে চট করে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়।তবে অনেকেই বার বার ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে থাকেন।  তাতে আবার উপকারের বদলে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বেশি। কারণ, ফেসওয়াশের মধ্যে যে রাসায়নিক উপাদানগুলি রয়েছে, তা ত্বকের পিএইচের ভারসাম্য নষ্ট করে দিতে পারে।তবে আশা করি এই আর্টিকেলটি ফেসওয়াশ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আপনাদের সাহায্য করবে। 

Write A Comment