আস্সালামু আলাইকুম আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই ভালো আছেন।বিভিন্ন কারণে বমি বমি ভাব বা পেটে অস্বস্তি হতে পারে।অনিয়মিত বা অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাস, মদ্যপান, অতিরিক্ত খাবার খাওয়া, খাদ্যে বিষক্রিয়া, অ্যালার্জি, মানসিক চাপসহ বমির অন্যতম কারণ। তবে বমি খুব জটিল কোনো সমস্যা নয়। একে বিভিন্ন সমস্যার উপসর্গ বলা যেতে পারে। বমি বন্ধ করা ওষুধ খেয়েও অনেক সময় কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায় না।  অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঘরোয়া কিছু উপায় অবলম্বন করে বমি বমি ভাব দূর করার সম্ভব হয় ।

বমি বমি ভাব বা বমি :

বমি বমি ভাব হল আপনার পেটেরমধ্যে অস্বস্তিকর অনুভূতি যা বমি করার তাগিদ দিয়ে থাকে। বমি হল মুখের মাধ্যমে পেটের বিষয়বস্তুর অনৈচ্ছিক বা স্বেচ্ছায় বহিষ্কার। বমি শুধুমাত্র পেটের সমস্যার ফলেই নয়, এটি অভ্যন্তরীণ কানের (মাথা ঘোরা এবং গতির অসুস্থতা) বা এমনকি মস্তিষ্কের (মাথার আঘাত, মস্তিষ্কের সংক্রমণ, টিউমার এবং মাইগ্রেনের মাথাব্যথা) দ্বারাও উদ্ভূত হতে পারে।

বমি এবং বমি বমি ভাবের মধ্যে পার্থক্য আছে। অনুভূতিকে বমি বমি ভাব হিসাবে বর্ণনা করা হয়ে থাকে  এবং পেটে বিষয়বস্তু ছুঁড়ে ফেলার কাজ হল বমি। 

বমি বমি ভাব বা বমি হওয়ার কারণ:

বমি বমি ভাবের সাথে অন্য কোনো উপসর্গ থাকলে সেগুলো দেখে বমি বমি ভাবের কারণ সম্পর্কে ধারণা করা হয়ে থাকে। তবে কখনো কখনো অন্য কোনো উপসর্গ ছাড়াই, শুধু বমি বমি ভাব থাকতে পারে।

  • ডায়রিয়া বা ফুড পয়জনিং এর কারণে বমি হতে পারে। 
  • মাথাব্যথা ও জ্বর বা ফ্লু এ জাতীয় কোনো ইনফেকশন এর  কারণে বমি হতে পারে। 
  • খাওয়ার পর বুক জ্বালা-পোড়া করা অথবা পেট ফাঁপার সমস্যা দেখা দেওয়া এসিড রিফ্লাক্স (পাকস্থলীর এসিড খাদ্যনালী দিয়ে উপরে উঠা আসা), যাকে ‘গ্যাসের সমস্যা’ বলা হয়। এই গ্যাসের সমস্যার কারণে বমি হতে পারে। 
  • মাথাব্যথা এবং তীব্র আলো ও শব্দের  প্রতি সংবেদনশীলতা, মাইগ্রেন,
  • মাথা ঘুরানো,লেবিরিন্থাইটিস বা ভার্টিগো ইত্যাদি কারণে বমি হতে পারে। 

অন্যান্য যেসব কারণে বমি বমি ভাব হয়:

  • গর্ভাবস্থায় মর্নিং সিকনেস হলে বমিবমি ভাব দেখা দেয়। 
  • মোশন সিকনেস এর কারণে চলন্ত গাড়িতে থাকা অবস্থায় বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে।
  • অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার কারণে বমি বমি ভাব হতে পারে।
  • মদ্যপান করলে বমি বমি ভাব হতে পারে।
  • অনেকের ঔষধ সেবনের পরে বমি ভাব দেখা দেয়। 
  • আবেগী মানসিক যন্ত্রনা বমি বমি ভাব হতে পারে।
  • দুশ্চিন্তাগ্রস্ত অবস্থায় অনেক সময় এমনটা হতে পারে
  • সম্প্রতি সার্জারি হয়েছে এমন রোগীদের অনেক সময় বমি বমি ভাব বোধ হতে পারে।
  • ঠিক কী কারণে বমি বমি ভাব হচ্ছে তা বুঝতে না পারলে চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। যেসব উপায় অবলম্বন করলে সাধারণত বমি বমি ভাব দূর হয় সেগুলো চেষ্টা করে দেখতে হবে৷ তারপরও ভালো না হলে কিংবা কয়েকদিন পরও বমি বমি ভাব না গেলে ডাক্তারের পরমর্শ নিতে হবে। 

বমি হলে যে খাবার খাওয়া উচিত:

বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া খুব সাধারন একটি ঘটনা। বিভিন্ন কারণে বমি হতে পারে তবে বমি যে কারণেই হোক না কেন তা সাধারণ পর্যায়ে থাকতেই ঘরোয়া কিছু উপায়ের মাধ্যমে এই বমি ভাব দূর করা সম্ভব। পাকস্থলীকে শীতল করার জন্য এবং বমি ভাব বন্ধ করার জন্য সাহায্য করে এমন কিছু খাবার যা খেলে এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব হয় ।

মসলা বিহীন খাবার:

বমি হওয়ার পরে মসলাযুক্ত খাবার খাওয়াউচিত নয় । কারণ মসলাযুক্ত খাবারে গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি সমস্যার সৃষ্টি হয় যার কারণে বমি মাত্রা আরও বাড়তে পারে । তাই বমি হওয়ার পর কম মসলাযুক্ত খাবার খেতে হবে।

খাবার স্যালাইন:

সাধারণত বমি হওয়ার পর শরীর থেকে অনেকটা লবন ও পানি বের হয়ে যায় যার ঘাটতি পূরণ করতে খাবার স্যালাইন খাওয়া অত্যান্ত জরুরী। যদি একবারে খাবার স্যালাইন না খেতে পারেন তাহলে একটু পরপর অল্প অল্প করে স্যালাইন খেতে পারেন।

আদা:

আদা কুচি করে পানির সাথে মিশিয়ে মধু দিয়ে পান করলে বমি বমি ভাব অনেকটা দূর হয়। আদা চা অনেক সময় বমি কমতে সাহায্য করে থাকে । তাই বমি কমাতে আদার চা খেতে পারেন।

কমলার জুস:

বমি বমি ভাব হলে বা বমি হওয়ার পরে এক গ্লাস কমলার জুস খেতে পারেন। এটি শারীরিক প্রশান্তি দিতে সাহায্য করবে। অনেক সময় কমলার জুস বমি বমি ভাব দূর করে থাকে।

লেবু ও মধু:

এক গ্লাস ঠান্ডা পানিতে লেবু ও মধু মিশিয়ে পান করুন। লেবুতে অনেক ধরনের খনিজ উপাদান থাকে যা বমি বমি ভাব দূর করতে সাহায্য করে ।

লবঙ্গ:

লবঙ্গ বমি ভাব কমাতে একটি অত্যন্ত কার্যকারী উপাদান । যদি বমি বমি ভাব হয় বা বমি হয় তাহলে একটি লবঙ্গ নিয়ে মুখে রাখুন এতে আপনার বমি বমি ভাব দূর হতে পারে।

লবন‌‌ ও চিনি:

যেহেতু বমি হওয়ার পর শরীর থেকে  অনেকটাই পানি ও লবণের‌ অংশ বের হয়ে যায় ,তাই এই লবণ ও চিনি পানিতে মিশিয়ে পান করলে শরীরে লবণ ও পানির ঘাটতি পূরণ হবে।

নোনতা বিস্কিট:

অনেক সময় বমি হলে আমাদের খাবারে অনিহা দেখা দেয় কিছুই খেতে ইচ্ছে করে না। সে‌ সময় মিষ্টি জাতীয়‌ কিছু খেলেও অস্বস্তি লাগে।আর বমি হওয়ার পর কোন ভাবেই পেট খালি রাখা ঠিক নয়। এ সময় নোনতা বিস্কিট খাওয়া যেতে পারে।

ব্রাট ডায়েট:

কলা ভাত আপেল ও টোস্ট এই খাবারগুলোহচ্ছে ব্রাট  ডায়েট। বমি হওয়ার পর সাধারণত ক্ষুধা নিবারণের জন্য এই খাবারগুলো খাওয়া যায় কারণ কলা  পাকস্থলীকে শীতল রাখবে।

মৌরি:

খাবার পর একটু মুড়ি খাবেন এতে বমি ভাব দূর হবে এবং মুখের ভেতরও তরতাজা থাকবে।সাধারণত বমি হওয়া টা আমাদের কারোই নিয়ন্ত্রণে থাকে না। অনেক সময় অপাচ্য সংক্রামক কিছু পেটে পড়লেই বমি সমস্যা হয়ে থাকে। 

আরো পড়ুন :দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমানোর উপায়।

পরিশেষে :

বলা যাই যে ,বমি একটি সাধারণ ঘটনা। তবে সব সময় স্বাভাবিক কারনেও বমি নাও হতে পারে।বমি হলে কি খাওয়া উচিত, কোন রোগের লক্ষণ হিসেবে বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে। তাই বমি বমি ভাব বা বমি দীর্ঘদিন হয়ে থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তাছাড়া যদি মাঝে মাঝে স্বাভাবিক কোনো কারণে আপনার বমি হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই ঘরোয়া ভাবে বমি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আশা  করি এজন্য এই আর্টিকেলটি আপনাকে সাহায্য করবে। 

Write A Comment