প্রিয় পাঠক আসসালাম আ’লাইকুম। আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই ভাল আছেন।মধু ও কালোজিরার নাম শুনেনি এ রকম মানুষ খুব কমই আছে । মধু ও কালোজিরাকে ঘরোয়া ঔষধ হিসাবে সেবন করছে সারা বিশ্বে। মধু ও কালিজিরা গুনাগুন লিখে প্রকাশ করা সম্ভব হবে না।
প্রাচীনকাল থেকেই কালোজিরা এবং মধু ব্যবহার হয়ে আসছে বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে। শুধুমাত্র এটি ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করে তা কিন্তু নয় বিভিন্ন রোগ দুরে থাকার জন্য এটির ঔষধি গুণাগুণ অতুলনীয়।
কালোজিরা :
বাংলাদেশের সাধারণত কালোজিরা খুব পরিচিত একটি নাম এবং এটি দেখতে কালো জাতীয় ছোট ছোট দানাদার ।এই কালোজিরার ভিতরে অন্তর্নিহিত উপাদান এবং উপকারী সকল গুনাগুন দিয়েছেন সৃষ্টিকর্তা ।
এছাড়া ও কালোজিরা যে কতটা গুনাগুন এবং পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাদ্য দ্রব্য তা উল্লেখ আছে ইসলাম ধর্মের পবিত্র কোরআনে। কালোজিরার মধ্যে বিভিন্ন পুষ্টিগুণের উপাদান এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপাদান হলো –
- ফসফেট।
- ফসফরাস।
- লৌহ।
- কার্বোহাইড্রেট।
কালোজিরা খুব প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ থাকায় বিভিন্ন রোগের প্রতিষধক হিসাবে কাজ করে।
মধু:
বাংলাদেশ নয় সারা পৃথিবীতে মধু একটি পরিচিত নাম। সাধারণত মধু মৌমাছির মাধ্যমে বিভিন্ন ফুলের নির্যাসের মিশ্রণ হতে মধু তৈরি হয়।
সাধারণত মধু একধরনের মিষ্টি জাতীয় ঘন তরল পদার্থ। আমরা মধু পেয়ে থাকি মৌচাক থেকে। এক দল মৌমাছি বিভিন্ন ফুল হতে নির্যাস নিয়ে মৌচাক তৈরি করে। যা মানুষের পক্ষে তৈরি করা সম্ভব নয়। মধুর ঘনত্বের অনেক বেশি এজন্য এর ভিতরে কোন জিবানু ১ ঘন্টার বেশি টিকে থাকতে পারে না।লক্ষ কোটি মৌমাছির অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল হলো মধু ।
তবে বাংলাদেশ ও মধু উৎপাদনের ক্ষেত্রে অনেকটা এগিয়ে গেছে। প্রচীন কাল থেকেই মধুর বেশির ভাগ যোগানটা আসে সুন্দরবন থেকে।
মধু ও কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা:
কালোজিরা ও মধুতে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুন ইসলাম হাদিসের মতে ,মৃত্যু ব্যতিত সকল রোগের ঔষধ হচ্ছে কালোজিরা। কালোজিরা অনেক রোগের ঔষধ অপরদিকে মধুর গুনাগুনও অতুলনীয়। মধু বিভিন্ন রোগের মহাঔষধ। কালোজিরা ও মধুর এই দুটি উপাদানের পুষ্টিগুনের কথা বলে শেষ হবে না। নিম্নে মধু এবং কালোজিরা এর ব্যাবহারের নিয়মর নিম্নে দেয়া হলো –
-
নিদ্রাহীনতায় মধু ও কালোজিরা:
মানুষের দেহকে সুস্থ এবং সুন্দর রাখার জন্য ঘুমের কোনো বিকল্প নেই। তবে অনেকেই নিদ্রাহীনতা সমস্যায় ভুগে থাকেন। এরকম দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকলে বিভিন্ন জটিল সমস্যা দেখা দিতে পারে। এজন্য প্রথমে এক গ্লাস গরম দুধের সাথে মধু এবং এক চামচ কালোজিরার গুঁড়া মিশিয়ে ঘুমের পূর্বে সেবন করবেন। থাকবে। এরপর বুঝতে পারবেন অনিদ্রা দূর করার জন্য মধু ও কালোজিরার তুলনা নাই ।
-
বাতের ব্যাথায় মধু ও কালোজিরা:
বাতের ব্যাথা জন্য মধু ও কালোজিরা খুব উপকারি।বাতের ব্যাথায় আরাম পেতে, ব্যথার জায়গা ভাল করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এরপর কালোজিরার তেল মালিশ করতে হবে এবং এক চা- চামচ কাঁচা হলুদের রসের সঙ্গে ১ চা চামচ কালোজিরার তেল ও ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে দিনে তিনবার খান। ২-৩ সপ্তাহ টানা খেলে ফল মিলবে অবশ্যই ।
-
পিঠে ব্যথায় মধু ও কালোজিরা:
আমাদের দেহে বাসা বাঁধা দীর্ঘমেয়াদী রিউমেটিক এবং পিঠে ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে কালোজিরার থেকে তৈরি তেল। এছাড়া সাধারণভাবে কালোজিরা ও মধু খেলেও অনেক উপকার পাওয়া যায়।
-
মাথা ব্যাথায় কালোজিরা ও মধুর
অতিরিক্ত মাথা ব্যাথায় কালোজিরার কোনো বিকল্প নেই। কালোজিরার গুড়ো পরিমাণ মতো নিয়ে তার অর্ধেক পরিমাণ লবঙ্গ এবং অর্ধেক পরিমাণ মৌরিফুল এবং মধু দুধের সাথে মিশিয়ে মাথা ব্যাথার সময় সেবন করলে মাথা ব্যাথা নিমিষেই কমে যাবে। এছাড়া কালিজিরার তেল ব্যবহার করে খুব সহজেই মাথা ব্যাথা দূর করা সম্ভব হয় । কালোজিরার তেল ত্বকের জন্য অনেক উপকারী।
-
ত্বকের যত্নে কালোজিরা ও মধুর:
কালোজিরার তেল ব্যবহারে মুখের ত্বক ফর্সা হয় এবং এসিডদগ্ধ কিংবা ব্রণ ও পোড়া স্থানে যদি চামড়া কালো হয়ে যায় বা পুড়ে যায় সে ক্ষেত্রে কালোজিরার তেল মাখলে খুব অল্প দিনেই সেই জায়গার এসিডদগ্ধ বা পোড়া দাগ দূর হয়ে যায়। মধু আয়ুর্বেদ সাধারণত মহৌষধ হিসেবে কাজ করে থাকে ।
-
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে মধু এবং কালোজিরার ব্যবহার:
মধু এবং কালোজিরার এই দুটি উপাদানে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে জীবাণু ধ্বংসকারী উপাদান যা আমাদের শরীরের রোগ-জীবাণু বংশবৃদ্ধি করতে বাধা সৃষ্টি করে। নিয়মিত মধু এবং কালোজিরা সেবনে করলে আমরা বিভিন্ন রোগ থেকে দুরে থাকতে পারবো।
-
অ্যাজমা থেকে মুক্তি মধু এবং কালোজিরা এর ব্যবহার
বর্তমান সময়ে অনেক লোকই আছে যারা অ্যাজমা সমস্যায় ভুগছেন। এটি একটি মারাত্মক এবং যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা। এ থেকে পরিত্রান পাওয়া খুবই দুস্কর ব্যাপার।
তবে সমস্যা থেকে দীর্ঘস্থায়ী মুক্তি দিতে পারে মধু এবং কালোজিরা।এক চা-চামচ মধুর সাথে কয়েকটি কালোজিরা নিয়ে চিবিয়ে খান। 40 থেকে 45 দিন নিয়মিত একটানা এটি গ্রহণ করলে দীর্ঘস্থায়ী সমাধান পাওয়া সম্ভব।
-
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে মধু এবং কালোজিরা এর ব্যবহার:
ব্যক্তি জীবনে যাদের স্মৃতিশক্তি দুর্বল তারা বিভিন্ন ধরনের জটিলতায় পড়ে থাকবেন । তবে এই সমস্যা থেকে দীর্ঘস্থায়ী মুক্তি দিতে পারে মধু এবং কালোজিরা। স্মৃতিশক্তি সমস্যা দূর করতে কয়েকটি কালোজিরার সাথে এক চা-চামচ মধুর নিন। নিয়মিত এটি চিবিয়ে খাবেন। একটানা 40 থেকে 45 দিন নিয়মিত এটি গ্রহণ করলে দীর্ঘস্থায়ী সমাধান পাওয়া যায় ।
-
ওজন কমাতে মধু এবং কালোজিরার :
অতিরিক্ত ওজন এবং মোটা হয়ে যাওয়া একটি কঠিন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে বর্তমানে সময়ে । এটির জন্য দায়ী আমাদের অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস এবং অলস জীবনধারা। ওজন কমানোর জন্য যারা না খেয়ে থাকেন তারা পুষ্টিহীনতায় ভুগতে পারেন। আমাদের শরীরের নির্দিষ্ট পরিমাণের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই অতিরিক্ত ওজন কমানোর ক্ষেত্রে মধু এবং কালোজিরার সাহায্য গ্রহণ করতে পারি। অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য উষ্ণ গরম পানির সাথে লেবুর রস ,মধু এবং সামান্য পরিমাণ কালোজিরার গুঁড়ো একসাথে ভালো ভাবে মিশিয়ে পান করতে হবে । নিয়মিত পান করলে একদিকে যেমন আমাদের দেহে ক্যালরির ঘাটতি দেখা দেবে না অপরদিকে দ্রুত ওজন কমতে শুরু করবে।
-
সর্দি কাশি নিরাময়ের মধু এবং কালোজিরা এর ব্যবহার:
যে সকল মানুষেরা সর্দি-কাশির মতো সমস্যায় ভুগছেন। তারা যদি প্রতিদিন এক চা-চামচ কালোজিরার তেলের সঙ্গে পরিমাণমতো মধু মিশিয়ে দিনে 3 বার সেবন করে তাহলে খুব সহজেই সর্দি-কাশি থেকে নিরাময় পেতে পারেন। ।আর ও যদি খুব দ্রুত এই সর্দি, কাশি ও জ্বর থেকে নিরাময় পেতে চান তাহলে এক চা চামচ কালিজিরার তেলের সঙ্গে পরিমাণমতো মধু ও তুলসী পাতার রস মিশিয়ে সেবন করলেবেশি উপকার পাবেন।
আরো পড়ুন :তারাবির নামাজ সুন্নত না নফল এবং তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম।
পরিশেষে
বলা যাই যে ,কালিজিরার তেলের ও মধু শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি, হৃদরোগজনিত সমস্যার আশঙ্কা কমায়, ত্বকের সুস্বাস্থ্য, আর্থাইটিস ও মাংসপেশির ব্যথা কমাতে খুব উপযোগী। পেটের যাবতীয় রোগ-জীবাণু ও গ্যাস দূর করেএছাড়া চুলপড়া রোধ করতে সাহায্য করে। শ্যাম্পু করার পর ১৫ মিনিট পর কালোজিরার তেল মালিশ করুন। চায়ের সঙ্গে নিয়মিত কালোজিরা ও মধু মিশিয়ে পান করলে হৃদরোগে যেমন উপকার হয়, তেমনি ভাবে মেদ কমে যায়।এর উপকারিতাবলে শেষ হবে না।