আসসালামু আলাইকুম আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই বলো আছেন। মুখের স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্য ভেঙে পড়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। নানান কারণে মাড়ির সমস্যা দেখা দিতে পারে।তবে অযত্ন অবহেলায় মাড়ি ফুলে যেতে পারে, পুঁজ জমতে পারে ও ব্যথা হতে পারে। মাড়িতে ব্যথা হলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার আগে ঘরোয়া উপায়ে স্বস্তি পাওয়া যায় কিনা দেখা যেতে পারে।
মাড়ি ব্যথার সবচেয়ে পরিচিত কারণ:
মাড়ির রোগের একটি ক্ষুদ্র রূপ হচ্ছে জিঞ্জিভাইটিস। এর ফলে মাড়িতে লালচে ও ফোলা ভাব হয়। এর প্রধান কারণ হচ্ছে যথেষ্ট পরিমাণে ব্রাশ ও ফ্লস না করা। এই লক্ষণ দেখা গেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন হয় ।
নিউ ইয়ার্কের জেনারেল ডেন্টিস্ট্রি’র ডা. ইনা চের্ন এই বিষয়ে বলেন যে , দাঁতের ডা.ক্তারের কাছে গিয়ে অনেকক্ষণ ধরে মুখ হা করে থাকার ফলে মাড়িতে বা চোয়ালে ব্যথা হতেই পারে। এছাড়াও নানা রকম মাড়ির ক্ষত, প্রদাহ ও সংক্রমণের কারণেও মাড়ি ব্যথা হয়।
ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে, ডা. চের্ন আরও বলেন, “মাড়ির ব্যথার অন্যতম কারণ হল মুখের ক্ষত ও ফোলাভাব। এই ঘা যে কোনো সময় ঠোঁট, গালের ভেতর, চোয়াল, জিহবা বা মাড়িতে দেখা দিয়ে থাকে। ”
আবার এই চিকিৎসকের মতে, “মাড়িতে ব্যথা হওয়ার আরেকটি কারণ হতে পারে ঝাল মসলাদার খাবার। এই ধরনের খাবার খাওয়া সরাসরি ব্যথার সৃষ্টি করে না। তবে সংবেদনশীলতার সমস্যা থেকে থাকলে এমনটা দেখা দেয়।
মাড়ির ব্যথায় ঘরোয়া উপায়:
মাড়িতে ব্যথা হলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার আগে ঘরোয়া উপায়ে স্বস্তি পাওয়া যায় কিনা দেখা যেতে পারে। এখানে মাড়ির ব্যথা কমাতে পাঁচ ঘরোয়া উপায় দেয়া হলো-
লবঙ্গ ও হলুদের মিশ্রণ:
লবঙ্গ ও হলুদ যে-কোনও রকমের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে থাকে । এছাড়া, এই দুটি আয়ুর্বেদিক উপকরণ দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ভূমিকা রাখে। এছাড়াও কোন রকম ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হলে তাও প্রতিরোধ করে এই উপাদান।
লবণ ও গরম পানি :
মাড়ি, দাঁত ও মুখের ভিতরের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে লবণ মেশানো গরম পানি দিয়ে কুলি করা বেশ কার্যকরী সমাধান। বিশেষজ্ঞদের কথায়, মাড়ি ও দাঁত এ কোনও রকম সংক্রমণ হলে তাও সেরে যায়। এক গ্লাস গরম পানিতে সামান্য লবণ মিশিয়ে নিয়মিত কুলকুচি করলে উপকার পাবেন।
ঠান্ডা-গরম সেঁক:
এটি যেকোন ধরনের ব্যথা কমানোর অন্যতম পরিচিত উপায় । ব্যথার জায়গায় বরফের ব্যাগ বেশ কিছুক্ষণ ধরে রাখলে ব্যথা অনেকটাই কমে যায়। এর পাশাপাশি গরম পানির ব্যাগ দিয়েও সেঁক দিতে পারেন। এতে ব্যথার থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
গ্রিন টির পাতা:
ব্যথা নিরাময়ে গ্রিন টি-এর প্রদাহ কমানোর ক্ষমতাও কাজে লাগানো যেতে পারে। ব্যথা কমাতে একটি টি ব্যাগ প্রথমে গরম পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন। এরপর ঠান্ডা করে নিয়ে মাড়িতে পাঁচ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। দিনে দুবার এমনটা করলেই ব্যথা অনেকটা কমে যাবে।
হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড:
হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মাড়ির ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে পারে। এটা হলো জীবাণু ধ্বংসের একটি শক্তিশালী প্রতিনিধি। এটা মুখের অন্য সমস্যায়ও কার্যকর। অর্ধেক পানি ও অর্ধেক হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মিশিয়ে এই দ্রবণকে মুখের ভেতর ২০ সেকেন্ড রেখে ফেলে দিন। এবার কুসুম গরম পানি দিয়ে ভালোভাবে মুখের ভেতর ধুয়ে ফেলুন।
কাঁচা রসুন:
কাঁচা রসুন থেঁতলে মাড়ির মধ্যে লাগান। এটি মাড়ির ব্যথা কমাতে কাজ করবে।
মাড়ির ব্যথার কমাতে উপকারী ও অপকারী খাবার :
ডা. চের্ন-এর মতে, মাড়ির ব্যথা সাময়িক সমস্যা। আর এই সময় ব্যথার জন্য উপকারী ও অপকারী খাবার সম্পর্কে ধারণা রাখা কার্যকর।তার মতে ,মাড়ি ব্যাথা হলে কিছু খাবার উচিত আবার কিছু খাবার পরিহার করা উচিত। নিম্নে আলোচনা করা হলো –
মাড়ির ব্যথার জন্য উপকারী খাবার:
ব্যথা যদি মাড়ির প্রদাহ বা সাম্প্রতিক দাঁতের কাজের কারণে হয় তাহলে নরম-জাতীয় খাবার খাওয়ার।
এক্ষেত্রে ভাত, আলু ভর্তা, সুপ, মাছ, অ্যাভোকাডো, মটরশুঁটি, ছোলা, টফু, পাস্তা, ওটমিল, ডিম, পনির এবং ভালোভাবে রান্না করা সবজি খাওয়া উপকারী।
দাঁতের ‘আইএমএইচও’ করানোর পর কষ্ট কমাতে আইসক্রিম খাওয়া যেতে পারে বলে জানান এই চিকিৎসক।
মাড়িতে ক্ষত বা ফুসকুড়ির কারণে যদি ব্যথা হয় হবে খাবারে কিছুটা পরিবর্তন আনা দরকার।
মসলা খাবারের স্বাদ বাড়ালেও এই সময়ে তা বাদ দিতে হবে। এছাড়াও অতিরিক্ত অ্যাসিডিক খাবার বাদ দেয়াই ভালো ।
অনেক সময় খাবারের তাপমাত্রাও মাড়ির ওপরে প্রভাব ফেলে। তাই অতিরিক্ত ঠাণ্ডা বা গরম খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।
মাড়ি ব্যথার যেসব খাবার এড়াতে হবে:
ব্যথার ওপর ভিত্তি করে কী খেতে হবে আর কী বাদ দিতে হবে তা নির্ধারণ করা যায়।
যদি মাড়িতে ব্যথা থাকে তাহলে মাড়িতে আটকে যেতে পারে এমন খাবার না খাওয়াই ভালো। যেমন -বীজ, শস্য ও মাংস ইত্যাদি।
মাড়িতে ক্ষত বা মসলাদার খাবারের জন্য ব্যথা হলে এসব খাবারের পাশাপাশি অম্লীয় খাবার যেমন- টক ফলের রস, টমেটো সস ও কফি গ্রহণ না করা উচিত।
কার্বোনেটেইড বা কোমল পানীয়তে পিএইচয়ের মাত্রা কম থাকে এবং অম্লীয় হয় যা মাড়ির ক্ষতি করে। তাই এই ধরনে খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন ডা. চের্ন।উপরের নিয়মাগুলো মেনে চললে মাড়ির ব্যথা কমানো সম্ভব।
আরো পড়ুন :নাকের এলার্জি প্রতিরোধ করার উপায়।
পরিশেষে:
বলা যাই যে,মাড়ি ব্যাথাতে এই আর্টিকেলটি আপনাদের সাহায্য করবে। তবে ব্যথার মাত্রা গুরুতর হলে দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। মাড়ি ও দাঁতের যে কোনো ধরনের সমস্যায় অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এ ছাড়া সঠিক উপায়ে দাঁত ব্রাশ করা, ফ্লোরাইড সমৃদ্ধ টুথপেস্ট ব্যবহার, কেমিক্যালযুক্ত খাবার এড়ানোর চেষ্টা এবং নরম ব্রাশ ব্যবহার করা উচিত।