আসসালামু আলাইকুম আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছেন। আমাদের শরীর যখন যে-কোনো ধরনের রোগ-জীবাণু কিংবা ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়, তখন সেগুলো থেকে আমাদের শরীরকে রক্ষা করে আমাদের শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা। সুতরাং, যার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যতটা ভালো হয় , তার রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি ততই কম থাকে । রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার কিছু অংশ আমরা জন্মের সময়ই অর্জন করে থাকি আর বাকিটা আমাদের জীবনযাপন পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে থাকে।

মানুষ কীভাবে সুস্থ থাকতে পারে এবং কোন উপায়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে, সেটি নিয়ে নানামুখী গবেষণা হয়েছে বিশ্বজুড়ে।চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী না হলে অল্প অসুস্থতাতেও মানুষ খুব সহজে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং রোগের আক্রমণও জোরালো হয়।

শরীরে রোগব্যাধি প্রতিরোধে সঠিক খাবার খাওয়াটা অত্যান্ত জরুরি। কিছু খাবার আছে যেগুলো নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। 

এসব খাবারের গুণাগুণ সম্পর্কে  পুষ্টিবিদ সাজেদা কাশেম জ্যোতি পরামর্শ দিয়েছেন যে।,”আমরা যা-ই খাই তা যদি শোষিত হয়ে শরীরের ক্ষয়পূরণ, রোগ প্রতিরোধ ও বৃদ্ধি সাধন করে, তবেই তাকে খাদ্য বলে। 

রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায়:

(১) দুগ্ধজাত খাবার:

দুগ্ধজাত খাবারগুলো বিজ্ঞানের ভাষায় প্রোবায়েটিকস হিসেবে পরিচিত হয়। যেমন- দই, ঘোল, ছানা ইত্যাদি। এ জাতীয় খাবার আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে থাকে। 

(২) সেলেনিয়াম: 

সেলেনিয়াম জাতীয় খাবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।  সামুদ্রিক খাবার, মাশরুম, বার্লি, গরুর দুধ, ডিম, সূর্যমুখীর বীজ, টিসির বীজ, আখরোট, বাঁধাকপি, পালংশাক, ব্রোকলি, রসুন সেলেনিয়ামের ভালো উৎস।

(৩) আয়রন: 

এটি আমাদের দেহে অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে। মাংস, পালংশাক এবং সবুজ শাকসবজি, মিষ্টি কুমড়ার বীজ, শুকনা ফল ইত্যাদিতে ভালো পরিমান আয়রন থাকে।

(৪) কপার: 

এটি আয়রনের সঙ্গে শ্বেত রক্তকণিকা গঠন করতে কাজ করেথাকে । শস্যজাতীয় খাবার, বিভিন্ন সবজির বিচি, বাদাম, সবুজ শাকসবজি ,মাংস ইত্যাদিতে কপারের ভালো থাকে।

(৫) ফলিক অ্যাসিড: 

ডিএনএ এবং আরএনএ গঠনে সহায়তা করে থাকে ফলিক অ্যাসিড। ‍ সবুজ শাকসবজি, বিচি জাতীয় খাবার, বাদাম, সূর্যমুখীর বীজ, শস্যজাতীয় খাবার ও ডিম ইত্যাদি এর উৎস।

(৬) ভিটামিন এ: 

ভিটামিন এ রোগপ্রতিরোধ এবং প্রদাহ প্রতিরোধী সিস্টেমে উন্নতিতে সহায়তা করে থাকে । মিষ্টি আলু, লাল রঙের ফুল এবং সবজি, সবুজ শাকসবজি, পাকা পেঁপে এগুলোতে বেশি পরিমান ভিটামিন এথাকে।

(৭) ভিটামিন সি: 

ভিটামিন সিতে ভালো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা ত্বককে ফ্রি রেডিকেল থেকে সুরক্ষা করে। টক জাতীয় ফল, পেঁপে, স্ট্রবেরি আনারস ভিটামিন সি এর ভালো উৎস।

(৮)ভিটামিন ই: 

সূর্যমুখীর বীজ, কাজু বাদাম, বাদাম, পালংশাক প্রভৃতি তে ভিটামিন ই ভালো থাকে ।এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। 

(৯) মসলা: 

হলুদ, গোল মরিচ এবং তুলসী এই আয়ুর্বেদিক উপাদানগুলো রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে থাকে ।

(১০) নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম: 

শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে শারীরিক পরিশ্রমের সম্পর্ক আছে। একজন মানুষ যখন শারীরিক পরিশ্রম করে তখন শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ভালোভাবে কাজ করে। শরীরের মাংসপেশি এবং হৃদযন্ত্র অনেক কার্যকরী হয়। একই সাথে শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। ফলে শরীরের দূরতম প্রান্ত পর্যন্ত অক্সিজেন পৌঁছতে পারে। তখন শরীরের কোষগুলোতে শক্তি উৎপাদন শুরু হয় । সুতরাং প্রতিদিন শারীরিক পরিশ্রমের সাথে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সম্পর্ক আছে।

যেসব খাবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে :

হেল্থ শটস ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে নয়া দিল্লির সালিমার বাগের ‘ফোর্টিস’ হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ মেডিসিন বিভাগের পরামর্শক ডা. পবন কুমার গয়াল বলেন, “চিনি ছাড়াও আরও কিছু খাবার আছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দিতে পারে।এরকম খাবারের মধ্যে আছে- 

(১)চিনি: 

অতিরিক্ত চিনি খাওয়া শ্বেত রক্ত কণিকাকে ব্যাক্টেরিয়া ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করার ক্ষমতা কমিয়ে দিয়ে থাকে। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।

(২)প্রক্রিয়াজাত খাবার: 

উচ্চ প্রক্রিয়াজাত খাবারে সোডিয়ামের মাত্রা বেশি থাকে। এছাড়াও এতে অস্বাস্থ্যকর চর্বি এবং কৃত্রিম সংরক্ষক ব্যবহার করা হয়, যা দীর্ঘমেয়াদী সংক্রমণ বাড়িয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে থাকে । 

(৩)অ্যালকোহল: 

প্রতিদিন অ্যালকোহল গ্রহণ রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে হ্রাস করে দেয় । ফলে দেহের সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করার ক্ষমতা কমে যায়।   

(৪)ভাজা খাবার: 

অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাওয়ার ফলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে অক্সিডেটিভ চাপ বাড়ে এবং দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ দেখা দেয়।

(৫)ট্রান্স ফ্যাট: 

ফাস্ট ফুড বা বেইক করা খাবার উচ্চ ট্রান্স ফ্যাট সমৃদ্ধ যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করার জন্য দায়ী।

(৬)উচ্চ সোডিয়াম বা লবণ সমৃদ্ধ খাবার: 

উচ্চ সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার দেহের রক্ত চাপ বাড়ায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে থাকে ।

(৭)অতি প্রক্রিয়াজাত শস্য: 

প্রক্রিয়াজাত শস্যের পুষ্টির মাত্রা ও আঁশের পরিমাণ কম যা অন্ত্রের‘মাইক্রোবিয়া’তে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে থাকে । ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষ্মতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

(৮)অতিরিক্ত ক্যাফেইন: 

অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ ঘুম চক্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যে কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়।

আরো পড়ুন :চুল সোজা ও ঝলমলে করার ঘরোয়া কিছু উপায়

পরিশেষে: 

বলা যায় যে ,সুস্থতার জন্য সুষম খাবার খাওয়াটা জরুরি। অনেকে না বুঝে কম-বেশি খেয়ে শরীরকে রোগাক্রান্ত করে ফেলেন। আবার কিছু খাবার আছে যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এজন্য শরীরে বাসা বাধে নানা রোগব্যাধি। শরীরে রোগব্যাধি প্রতিরোধে সঠিক খাবার খাওয়াটা জরুরি।আশা  করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে। 

Write A Comment