আস্সালামু আলাইকুম আসা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছেন। লিভার মানবদেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির লিভারের ওজন তিন পাউন্ড পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই লিভার আমাদের দেহের অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ কাজের সঙ্গে জড়িত। যেমন- হজম শক্তি, দেহে পুষ্টি যোগানো ,মেটবলিজম, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ইত্যাদি। একটি সুস্থ লিভার আমাদের দেহের রক্ত প্রবাহ নিয়ন্ত্রন করে, রক্ত থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বের করে দেয়, দেহের সকল অংশে পুষ্টি যোগায়। এছাড়াও লিভার ভিটামিন, আয়রন এবং সাধারণ সুগার গ্লুকোজ সংরক্ষন করে। লিভার যেহেতু আমাদের দেহের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ তাই যে কোন উপায়ে লিভারের যত্ন নেয়া উচিত। 

লিভার (Lever):

লিভার হচ্ছে এমন একটি সোজা বা বাঁকানো দৃঢ় দণ্ড যা একটি নির্দিষ্ট স্থির বিন্দুকে কেন্দ্র করে ঐ বিন্দুর চারদিকে অবাধে ঘুরতে পারে। লিভারকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যথা-

  • প্রথম শ্রেণির লিভার
  • দ্বিতীয় শ্রেণীর লিভার
  • তৃতীয় শ্রেণির লিভার

আর এই  লিভার বিভিন্ন কারণে অনেক সময় ঠিকমতো তার কাজ সম্পাদন করতে পারে না। ফলে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে এবং অনেক সময় লিভারে চর্বি জমতে শুরু করে। লিভার ভালো না থাকলে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই লিভারের যত্ন নেওয়া জরুরি এবং বিষাক্ত পদার্থ থেকে লিভারকে পরিষ্কার করাও জরুরি।

লিভার পরিষ্কার রাখার উপায় :

লিভার থেকে পিত্তরস নিঃসৃত হয় যা আমাদের খাদ্য পরিপাকের, বিশেষ করে স্নেহজাতীয় খাদ্য পরিপাকের একটি অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। লিভারে ইউরিয়া তৈরি হয়। লিভার নিজেই একটা গুরুদায়িত্ব পালন করে। সারা দেহের টক্সিন  লিভার বের করে দেয়। এছাড়া লিভার বাইল বের করে। এই বাইল খাবার হজমে সাহায্য করে। তবে  আমাদের কিছু ভুল লিভারে গুরুতর সমস্যা তৈরি করে থাকে। তাই সতর্ক হয়ে যাওয়া হল খুবই জরুরি।

যেহেতু লিভার আমাদের দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ  অংশ তাই একে সুস্থ সবল রাখতে হবে। অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন দেহের লিভারের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে থাকে । অসুস্থ লিভারের কারণে ওজন বৃদ্ধি, হৃদরোগ,  হজমের সমস্যা, দীর্ঘ সময় ক্লান্তি অনুভব করা,এলার্জি ইত্যাদি এই সমস্ত অসুখ দেখা দিতে পারে। লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করতে কিছু খাবার গ্রহণ এবং বর্জনের মাধ্যমে সহজেই লিভার পরিষ্কার করতে পারবেন।যেমন- রসুন, আঙুর, কফি, গ্রিন টি, অলিভ অয়েল, নিম, এবং ওটমিল লিভার সুরক্ষায় সহায়তা করে।তাই দেহ ও লিভার সুস্থ রাখার জন্য কিছু খাবার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো –

পর্যাপ্ত পানি পান করুন:

 দিনে প্রায় ৭-৮ গ্লাস (২.৫ লিটার থেকে ৩ লিটার) পানি পানের অভ্যাস গড়ে তুলুন। আমাদের শরীরের প্রায় ৭০ শতাংশইহলো পানি । এই পানিই শরীরের টক্সিন লিভারের মাধ্যমে ছেঁকে বের করতে সাহায্য করে। যখনই শরীরে পানির অভাব হবে, তখন লিভারে ও শরীরে টক্সিন জমতে থাকে যা শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গেরও ক্ষতি করে। তাই লিভার বা দেহের সুস্থতায় পর্যাপ্ত জল পান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

  গ্রিন-টি: 

গ্রিন-টিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা আমাদের শরীরের ফ্রি রেডিকেল টক্সিসিটি দূর করে এবং লিভার পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে থাকে ।এক থেকে দু’কাপ গ্রিন-টি  প্রতিদিন পান করার ফলে লিভারে জমে থাকা টক্সিন দূর হয়ে যায় এবং গোটা শরীরের সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো সঠিক ভাবে কাজ করতে সক্ষম হয়।

রসুন: 

লিভারকে পরিষ্কার রাখার জন্য উত্তম খাবার হল রসুন। রসুনের এনজাইম লিভারের ক্ষতিকর টক্সিক উপাদান পরিষ্কার করে। এতে আরও দুটি উপাদান রয়েছে যার নাম এলিসিন এবং সেলেনিয়াম যা লিভার পরিষ্কার রাখে এবং ক্ষতিকর টক্সিক উপাদান হতে লিভারকে রক্ষা করে।

লেবু: 

সাইট্রাস জাতীয় ফল লেবু লিভারকে সুরক্ষিত রাখে। লেবুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান দেহের লিভার পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এবং ডি লিমনেন উপাদান লিভারে এনজাইম সক্রিয় করে থাকে। এছাড়া লেবুর ভিটামিন সি লিভারে বেশি করে এনজাইম তৈরি করে যা হজম শক্তির জন্য খুব উপযোগী।  লিভারের নানান পুষ্টি উপাদানগুলো শোষণ করার শক্তি বৃদ্ধি করে লেবুর মিনারেল। বাসায় প্রতিদিন লেবুপানি পান করুন এবং চাইলে মধুও মিশিয়ে নিতে পারেন।  

আপেল: 

প্রতিদিন ১ টি করে আপেল খেতে পারেন কারণ  আপেল লিভারকে সুস্থ রাখে। আপেলের পেক্টিন, ফাইবার দেহের পরিপাক নালী হতে টক্সিন ও রক্ত হতে কোলেস্টরোল দূর করে থাকে এবং সাথে সাথে লিভারকেও সুস্থ রাখে। এছাড়া আপেলে আরও কিছু উপাদান আছে যেমন  ম্যালিক এসিড যা প্রাকৃতিক ভাবেই রক্ত হতে ক্ষতিকর টক্সিন দূর করে থাকে। যেকোন ধরণের আপেলই দেহের লিভারের জন্য ভালো কাজ করে। তাই লিভার সুস্থ রাখতে প্রতিদিন ১ টি করে আপেল খাওয়া উচিত।

হলুদ :

হলুদের মধ্যে কারকিউমিন নামক একটি উপাদান  রয়েছে। আর এই উপাদান লিভারের কোষের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে পারে। এছাড়া ও লিভারকে ক্ষতির হাত থেকে এই পদার্থ বাঁচায় । 

সবুজ শাক :

লিভার থেকে টক্সিন বের করে দেয় সবুজ শাক । সবুজ শাকের এমন কিছু গুণ রয়েছে যা টক্সিন গোটা শরীর থেকেই বের করে দেয়। এর মধ্যে রয়েছে ক্লোরোফিল নামক একটি উপাদান। এই উপাদানটি  রক্ত থেকে টক্সিন শুষে নিতে পারে। এছাড়া ও শাক পেটের জন্য ভালো।

মেডিটেশন ও ইয়োগা:

সুস্থ লিভারের জন্য মেডিটেশন ও ইয়োগা করা ও জরুরি। এর মাধ্যমে আপনার স্ট্রেস ম্যানেজ হয় । এটি আপনার কর্টিসলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে । যা আপনার লিভারের উপর চাপ কমাতে পারে।

জলপাইয়ের তেল:

লিভারের বিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে জলপাইয়ের তেল বা ফ্ল্যাক্সিড অয়েল। এতে দেহের বিষাক্ত পদার্থ দূর হয় এবং দেহকে সুস্থ রাখে।

আরো পড়ুন :অনলাইনে আয় করার নিশ্চিত উপায় বা মাধ্যম।

পরিশেষে :

বলা যায় যে আমাদের দেহের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ  লিভার তাই যে কোন উপায়ে একে সুস্থ সবল রাখতে হবে। অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন দেহের লিভারের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে। আশা করি লিভারকে সুস্থ রাখতে উপরে যে আলোচনা করা হয়েছে তা আপনাদের উপকারে আসবে। 

Write A Comment