আসসালামু আলাইকুম আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই ভালো আছেন। শ্বাসকষ্ট শব্দটি আমাদের কাছে খুব পরিচিত। বর্তমানে অধিকাংশ মানুষই শ্বাসকষ্টে ভুগছে। বছরের কোনো না কোনো সময় নিজেরা অথবা আশেপাশে কাউকে না কাউকে আমরা শ্বাসকষ্টে ভুগতে দেখি । একটু সর্দি-কাশি হলেই এই সমস্যা দেখা দেয়। 

শাসকষ্টের লক্ষণ ও ধরন:

জ্বরের মতো শ্বাসকষ্ট নিজে কোনো রোগ নয়। এটি অন্যান্য রোগের লক্ষণ হিসেবে দেখা দেয়। সাধারণত নাক বন্ধভাব, সর্দি, কাশি,হাঁচি, চখে চুলকানি ও পানি ঝরা, বুকে চাপ চাপ বোধ, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস ইত্যাদি লক্ষন শ্বাসকষ্টের সঙ্গে থাকে।

শ্বাসকষ্ট সাধারণত দুই ধরনেরহয়ে থাকে। প্রথমটি হচ্ছে  অ্যাকিউট বা তীব্র ধরনের, যা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তীব্র শ্বাসকষ্টে রূপান্তরিত হয়। এতে অতি দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। আর দ্বিতীয়টি  হলো ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্ট, যার তীব্রতা প্রথমে কম থাকে, পরে বাড়তে থাকে।

শাসকষ্টের কারণ :

কিছু অসুখের কারণে শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে । যেমন-

  • সাইনোসাইটিস, নিউমোনিয়া, হার্ট ফেইলিওর ইত্যাদি শ্বাসকষ্টের প্রধান কারণ।
  • সর্দি লাগলে অনেক সময় শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।
  • পালমোনারি ইডিমা বা ফুসফুসে পানি জমে গেলে শ্বাসকষ্ট ।
  • হৃৎপিণ্ডের বাম নিলয়ের কার্যকারিত কমে গেলে শ্বাসকষ্ট হয়।
  • অ্যাজমা বা হাঁপানি থাকলে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় ।
  • ব্রঙ্কাইটিসের কারণে ফুসফুসের ব্রঙ্কিউলের কিছু কিছু অংশ বন্ধ হয়ে গেলে শ্বাসকষ্ট হয়।
  • কোনো কারণে ফুসফুসের ভেতরের ছোট ছোট রক্তনালির অভ্যন্তরের রক্ত জমাট বেঁধে গেলে শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে।
  • ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা যেমন ডায়াবেটিস কিটোএসিডোসিস হলে শ্বাসকষ্ট হয়।
  • রক্তে এসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে ইত্যাদি কারণ গুলোর জন্য শ্বাসকষ্ট হয়।

শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় :

নিম্নে শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় উপায় গুলো আলোচনা করা হলো- 

  • ধূমপানের অভ্যাস থাকলে তা পরিহার করতে হবে। কারণ ধূমপান শ্বাস কষ্টের জন্য অত্যান্ত ক্ষতিকারক।
  • অ্যালার্জি থাকলে অ্যালার্জি  জাতীয় খাবার ও বস্তু এড়িয়ে চলুন যেমন ,গরুর মাংস ইলিশ মাছ,ধুলাবালি ইত্যাদি।
  • শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন।
  • বেশি পশমওয়ালা পশু বাড়িতে রাখবেন না।
  • আসবাব পত্র ও ঘরবাড়ি সব সময় পরিষ্কার পরিছন্ন ও ধুলা মুক্ত রাখুন।
  • হাঁপানি থাকলে হাঁপানি চিকিৎসা করতে হবে ।
  • ঘরবাড়ি পরিষ্কার বা গোছানোর সময় ডাস্ট মাক্স ব্যবহার করুন।
  • বাইরে গেলে ধুলাবালির হাত থেকে রক্ষা পেতে ডাস্ট মাস্ক পড়তে পারেন।

শ্বাসকষ্টের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কিছু ঘরোয়া উপায়:

বিশেষজ্ঞরাবলেন , বিভিন্ন কারণেই শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে। তবে ঘরোয়া কিছু উপায় মেনে চললে শ্বাসকষ্ট সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে।  এছাড়া নিয়মিত শ্বাসকষ্টের সমস্যা হলে অথবা অনেক বেশি পরিমাণে সমস্যা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। 

(১) শ্বাসকষ্টের সমস্যা হলে সামনের দিকে ঝুঁকে বসতে হবে। এটি করলে শরীর রিলাক্স হয় এবং শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে অসুবিধা কম হয়। এভাবে ঝুঁকে বসার ফলে ফুসফুস ও হার্টের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। তাই শ্বাসকষ্ট হলে এ পদ্ধতিটি অবলম্বন করতে পারেন । 

এটি করার ক্ষেত্রে কোনো চেয়ারে বসে, পা মেঝের সমতলে রেখে সামনের দিকে ঝুঁকে থাকতে হবে এবং ঘাড় ও কাঁধের পেশিগুলোকে রিলাক্সে রাখতে হবে। 

(২) শ্বাসকষ্টের সমস্যা থেকে মুক্তি পেটের পেশিকে ব্যবহার করে গভীরভাবে শ্বাস নিলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা অনেকটাকমে যেতে পারে।  

কোনো সমতল জায়গায় শুয়ে থেকে পেটের উপরে হাত রাখতে হবে।  তার পর নাক দিয়ে গভীরভাবে শ্বাস নিতে হবে। এভাবে গভীর শ্বাস গ্রহণ করে কিছুক্ষণ ধরে রেখে শ্বাস ছাড়তে হবে। 

(৩) ব্রিদিং এক্সারসাইজের মধ্যে পার্সড লিপ ব্রিদিং হচ্ছে— অনেক সহজ ও কার্যকরী। উদ্বেগের কারণে কখনও শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকলে এ পদ্ধতিটি অনেক বেশি কাজে আসে। এটি করতে প্রথমে ঘাড় ও কাঁধের পেশিগুলো রিলাক্স রাখতে হবে। এর পর ধীরে ধীরে নাকের মাধ্যমে শ্বাস গ্রহণ করে ২-৩ সেকেন্ড শ্বাস ধরে রাখতে হবে এবং এ সময় মুখ বন্ধ রাখতে হবে। তার পরে ঠোঁট হালকা খুলে শিস দেওয়ার মতন করে আস্তে আস্তে শ্বাস ছাড়তে হবে ৪-৫ সেকেন্ড ধরে।  এভাবে মিলবে অনেকটা স্বস্তি।

(৪) স্টিম ইনহেলার নেওয়ার কারণে অনেক সময় শ্বাসনালিতে ঘন শ্লেষ্মা জমতে পারেএ বং যেটি শ্বাসকার্যে বাধার সৃষ্টি করে। এ ক্ষেত্রে স্টিম ইনহেলেশন বা গরম ভাপ নিলে শ্বাসনালিতে জমে থাকা ঘন শ্লেষ্মা তরলে পরিণত হয়। ফলে শ্বাসনালিতে কোনো বাধা না থাকায় শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হয় । 

(৫) ব্ল্যাক কফিতে উপস্থিত ক্যাফেইন শ্বাসকষ্ট হ্রাস করতে অনেক উপকারী হয় । এই  ক্যাফেইনটি শ্বাসনালির পেশিগুলোকে রিলাক্স করতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, হাঁপানি রোগীদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা দূর করতে ক্যাফেইন বিশেষভাবে ভূমিকা রাখে। 

(৬) আদাতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ রয়েছে, যেটি ফুসফুসের প্রদাহ হ্রাস করতে বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকে ।  আদা চা অথবা হালকা গরম পানিতে আদা দিয়ে 

 অথবা আদা চিবিয়ে খেলে সেটি শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। 

(৭) হলুদে অনেক অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ রয়েছে। এটি শরীরকে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে। দুধের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে পান করলে সেটি শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে । হলুদে কারকিউমিন থাকার কারণে সেটি অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া এবং হিস্টামিন নিঃসরণ বন্ধ করতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে । এ গুণাবলিগুলো থাকার কারণে হলুদ শ্বাসকষ্ট সমস্যা দূর করতে অনেক উপকারী।

(৮) অনেকেই জানেন না হয়তো ডুমুর খেলে গায়ের রক্ত হয় ঠিকএ বং তার সঙ্গে  শ্বাসকষ্টেরও মোক্ষম ওষুধ। রাতে শোওয়ার আগে এক গ্লাস পানিতে ডুমুর ভিজিয়ে রাখুন সারা রাত এবং সকালে উঠে পানি সহ ডুমুর খেয়ে নিলে মিলবে সুরাহা। 

(৯)শ্বাসকষ্ট হলে সরষের তেল হালকা গরম করে বুকে-পিঠে, গলায় ভালো করে ম্যাসাজ করুন শ্বাসকষ্ট কমে যাবে। ফুসফুস ঠিক মতো কাজ করলেই শ্বাস-প্রশ্বাসও স্বাভাবিকভাবে হতে শুরু করে।

আরো পড়ুন :উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তনে।

পরিশেষ :

বলা যাই যে, জীবনযাপনে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। অবিলম্বে ধুমপান বর্জন করতে হবে। নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। শ্বাসকষ্ট থাকলে নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী শরীরচর্চা করুন, হাঁটাহাঁটি করুন। যদি কোনও ওষুধ চলে, তা হলে তা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বন্ধ করা চলবে না। বাড়ির বাইরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন। ধুলোবালি এড়িয়ে চলুন।

 

Write A Comment