আসসালামু আলাইকুম আশাকরি আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। সজিনা অতি পরিচিত একটি  সুস্বাদু সবজি। সজিনার ইংরেজি নাম হচ্ছে Drumstick এবং এর   বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে  Moringa Oleifera আর এর উৎপত্তিস্থল পাক-ভারত উপমহাদেশ হলেও এ গাছ শীত প্রধান দেশ ব্যতীত সারা পৃথিবীতেই জন্মে।  গাছে সব সময়  আমাদের দেশে ২-৩ প্রকার সজিনা পাওয়া যায়। বসতবাড়ির জন্য সজিনা একটি আদর্শ সবজি গাছ।

সজিনা পাতার পুষ্টি :  

বিজ্ঞানীরা পুষ্টির দিক দিয়ে সজিনাকে ‘পুষ্টির ডিনামাইট’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।  এ গাছটি থেকে পুষ্টি, ঔষধিগুণ ও সারা বছর ফলন পাওয়া যায়  বিধায় বাড়ির আঙিনায় এটি একটি ‘মাল্টিভিটামিন বৃক্ষ’ এর   পুষ্টিগুণ খাদ্যোপযোগী প্রতি ১০০ গ্রামে খাদ্য শক্তি কি. ক্যাল ৪৩, পানি ৮৫.২ গ্রাম, আমিষ ২.৯ (গ্রাম), শর্করা ৫.১ (গ্রাম),চর্বি  ০.২ (গ্রাম),  খাদ্য আঁশ ৪.৮ (গ্রাম), জিংক ০.১৬ (মি. গ্রাম), ক্যালসিয়াম ২৪ (মি. গ্রাম), আয়রন ০.২ (মি. গ্রাম), ভিটা-এ ২৬ (মি. গ্রাম), ভিটা-বি১ ০.০৪ (মি. গ্রাম), ভিটা-বি২ (মি. গ্রাম) ০.০৪ ভিটামিন-সি  ৬৯.৯ (মি. গ্রাম)। সূত্র বারটান/২০১৬

 সজিনা পাতার গুণাগুণ : 

সজিনার পাতা পুষ্টিগুণের আঁধার বিজ্ঞানীরা মনে করেন । নিরামিষভোগীরা সজিনার পাতা থেকে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হতে পারেন। পরিমাণের ভিত্তিতে তুলনা করলে একই ওজনের সজিনা পাতায় কমলা লেবুর ৭ গুণ ভিটামিন-সি,  গাজরের ৪ গুণ ভিটামিন-এ, দুধের ৪ গুণ ক্যালসিয়াম এবং দুই গুণ আমিষ,কলার ৩ গুণ পটাশিয়াম বিদ্যমান। 

বিজ্ঞানীরা আরও বলেন, সজিনা পাতায় ৪২% আমিষ, ১২৫% ক্যালসিয়াম, ৬১% ম্যাগনোসিয়াম, ৪১% পটাশিয়াম, ৭১% লৌহ, ২৭২% ভিটামিন-এ এবং ২২% ভিটামিন-সি সহ দেহের আবশ্যকীয় বহু পুষ্টি উপাদান থাকে।

 সিজনে পাতা গুঁড়া করার নিয়ম :

সিজনের সময় সজনে পাতা সংগ্রহ করে ডাল থেকে পাতাগুলো ছড়াতে হবে। তারপর ভালো ভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।এরপর রোদে শুকাতে হবে । শুকানোর পর এটাকে ব্লেন্ড করতে হবে।এটা ছয় মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে পারেন।   সারা দিনে যে পুষ্টি দরকার তা এক থেকে দুই চা চামচ সজনে পাতা গুঁড়ায় যথেষ্ট। এ জন্য এটাকে অলোকিক পাতা বলা হয়ে থাকে। 

সজিনা পাতার পাউডার খাওয়ার নিয়ম:

সজিনা পাতা অনেক ভাবে খোয়া যায় নিম্নে কিছু নিয়ম দেয়া হলো –

  • সজিনা পাতার পাউডার দুধের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়। এক গ্লাস দুধের সাথে দুই চামচ মরিঙ্গা বা সজনে পাতার পাউডার ভালোভাবে মিক্স করে খেতে পারেন।
  • আবার ১ গ্লাস নরমাল পানির সাথে ১-২ চামচ মরিঙ্গা বা সজনে পাতার পাউডার মিক্স করে খাওয়া যায়। ডঃ  আয়েশা সিদ্দিকার মতে, এইভাবে খেলে উপকার অনেক ভালো পাওয়া যায় ।
  • সবচেয়ে উত্তম উপায় হচ্ছে এটিকে জুস করে খাওয়া । কিছু সজনে পাতা নিন এবং ভালো করে পরিষ্কার করে এটাকে ব্লেন্ড করে নিন। কিছু পানি যোগ করে এবং একটু মধু দিয়ে খেয়ে নিন। 
  • সজিনা পাতার বড়া, পাতা বাটা ,সালাদ,ও সজিনা পাতার পাউডার দ্বারা খাদ্য সুস্বাদু ও শক্তি বর্ধক হয়। 
  • চা বা কফি তৈরিতে সজিনা পাতার পাউডার ব্যবহার করা যায়। 
  • যে কোনো স্যুপের সাথে শুকনা সজিনা পাতার পাউডার মিশালে খাদ্যমান বেড়ে যায়। 
  • এছাড়া ভর্তা খান, তবে এটা কাঁচা হলে বেস্ট। সিদ্ধ করলেন এই যে নানাবিধ যে উপাদানগুলো আছে, এটি কমে যেতে পারে । 

সজনে পাতার  উপকারিতা :

সজনে পাতার  পুষ্টিগুন্ বলে শেষ করা যাবে না। যারা অনেক দিন যাবত ডায়াবেটিস, গ্যাস্ট্রিক,  কোষ্ঠকাঠিন্য,  বদহজম,  ভিটামিন  ও ক্যালসিয়ামের অভাবে ভুগতেছেন  তাদের জন্য সিজনে পাতার গুঁড়া অনেক উপকারে আসবে।।

সজিনা পাতার উপকারিতা গুলো নিম্নে সুন্দরভাবে সাজিয়ে দেওয়া হলো-

ডায়াবেটিস: 

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সজনে পাতা ম্যাজিকের মতো কাজ করে এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে ডায়াবেটিস এমন একটা রোগ যা একবার হলে এ থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়া সম্ভব না।তবে সজনে পাতা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে। 

এক গ্লাস সজনে পাতার জুস ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।সজনে পাতা ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তের ইনসুলিনের মাত্রা ঠিক রাখে। 

গ্যাস্ট্রিক : 

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয় সজনে পাতা। প্রতিদিন এক গ্লাস সজনে পাতার জুস গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তি দিতে পারে। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থাকলে পেট ব্যাথা করে, বুক জ্বলে, পেট ফুলে উঠে ও খাবার রুচি কমে যায়। ইনশাআল্লাহ ,সজনে পাতা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি দেওয়া ছাড়া ও বদহজম ও দূর করে। 

কোষ্ঠকাঠিন্য:

পেটের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সজনে পাতা অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন এক গ্লাস সজিনা পাতার জুস দীর্ঘদিনের কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দিবে। এতে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট ও মিনারেল যা খাবার পরিপাক হতে সহায়তা করে।

ওজন কমায়:

সজিনা পাতা ওজন কমাতে ম্যাজিকের  মত কাজ করে। তবে ওজন কমানোর সবচেয়ে সহজ মাধ্যম হলো নিয়মিত ব্যায়াম করা। শরীরের অতিরিক্ত মেদ ওজন কমাতে সাহায্য করে, স্কিন ভালো রাখে অর্থাৎ শরীরের প্রত্যেকটি জায়গায় খুব ভালো কাজ করে সজিনা পাতা ।

যৌবন ধরে  রাখে:

সজিনা পাতায় রয়েছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, প্রোটিন ও ফাইবার যা যৌবন  ধরে রাখতে সহায়তা করে। শরীরে যে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হয় সজনে পাতার গুড়া ও সজনে ডাটা সেই ঘাটতি পূরণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

হার্ট সুস্থ রাখে:

সাধারণ মানুষের চেয়ে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বেশি থাকে। হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচতে হলে ডায়াবেটিস অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রতিদিন এক গ্লাস সজনে পাতার জুস খেতে পারেন। বেশি না15 থেকে 20 দিন সজনে পাতার জুস খেলে অনেক ভালো ফল পাবেন।

আরো পড়ুন :রূপচর্চায় ভিটামিন ই ক্রিম ব্যবহারের সময়, নিয়মএবং উপকারিতা

পরিশেষে :

বলা যাই যে সজিনার পাতা অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার। বিশেষজ্ঞরা অত্যাধিক পুষ্টিগুনে ভরপুর সজিনা গাছকে এবং এর পাতাকে “সুপার ফুড” বলে থাকেন।  এতে অত্যাধিক মাত্রায় ভিটামিন-এ,ভিটামিন-বি,আয়রন,জিংক,আয়োডিনসহ দেহের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ এবং পর্যাপ্ত অ্যামাইনো এসিড রয়েছে। এইগুড়া প্রতিদিন খেলে হাজারও রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।এছাড়াও শত বছর ধরে প্রায় তিনশরও বেশি রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

Write A Comment