আসসালামু আলাইকুম, আশা করি ভাল আছেন। আপনি হয়তো  সঞ্চয়পত্র করতে চান বা এ নিয়ে জানতে আগ্রহী। ঝুঁকি মুক্ত উপায়ে দীর্ঘ মেয়াদি বিনিয়োগের মাধ্যম হলো সরকারি সঞ্চয়পত্র। সঞ্চয় প্রিয় নাগরিক সহজেই করে ফেলতে পারে দীর্ঘ কালীন সঞ্চয়ি বিনিয়োগ।

সঞ্চয়পত্র একটি দীর্ঘ কালীন বিনিয়োগ তাই সল্প ভুলেও অনেক বড় মাশুল দিতে হতে পারে । এ জন্য  প্রতিটি বিষয়ে বিস্তারিত ধারনা নিয়েই সঞ্চয়পত্র কেনা উচিৎ।

সঞ্চয়পত্র :

বাংলাদেশের  জনগনকে  জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের অধীনে সঞ্চয়ে উৎসাহিত করা, ও ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ক্ষুদ্র সঞ্চয় জাতীয় স্ক্রিমে আহরণ করার উদ্দ্যেশে এবং জনসাধারণের ঝুঁকি মুক্ত ভাবে বিনিয়োগের পথ তৈরি করার নামই সঞ্চয়ত্র। একটি সামাজিক আর্থিক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা হচ্ছে সঞ্চয়পত্র যে ব্যবস্থায় ব্যবসা বা চাকরি করতে অক্ষম এমন ব্যক্তিগণ সরকারি সঞ্চয়স্কীমের আওতায় মাসিক বা ৩ মাস অন্তর অন্তর মুনাফায় দৈনন্দিন কর্মকান্ড সচল রাখতে পারেন। তাছাড়া ক্ষুদ্র সঞ্চয় অভ্যাস গড়তে দরিদ্র এবং সম্ভবহীন মানুষের জন্য আর্থিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার নামই সঞ্চয়পত্র স্কীম। বাংলাদেশ সরকার সঞ্চয়পত্রের সর্বোচ্চ মুনাফা প্রদানের সুযোগ রেখেছে যা কোন ব্যাংক বা অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রদান করে না

সঞ্চয়পত্র প্রকার:

সঞ্চয় পত্র সাধারণত দুই ধরনের হয়। যথা : 

  • বাংলাদেশিদের জন্য 
  • বাংলাদেশি প্রবাসীদের জন্য। 

বাংলাদেশিদের জন্য :

 বাংলাদেশে বসবাসকারী নাগরিকদের জন্য এই দুইটিকে আবার মেয়াদ ভিত্তিক ভাগ করা হয়েছে।যথা –

  • বাংলাদেশ সঞ্চয় পত্র(৫ বছর মেয়াদি)
  • তিন মাস  অন্তর অন্তর মুনাফা সঞ্চয় পত্র (৩ বছর মেয়াদি)
  • পরিবার সঞ্চায় পত্র(৫ বছর মেয়াদি)
  • পেনশন সঞ্চয় পত্র(৫ বছর মেয়াদি)

বাংলাদেশি প্রবাসিদের জন্য:

  • Wage Earner Development Bond
  • Us Dollar Investment Bond
  • Us Dollar premium Bond

কোথায় থেকে সঞ্চয়পত্র কিনতে হবে ?

আপনার অর্থের নিশ্চয়তার জন্য অফিসিয়াল উপায় অনুসরণ করুন। এক্ষেত্রে চারটি স্থান থেকে সঞ্চয় পত্র কেনা যাবে। সেগুলো হচ্ছে :

  • জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর :

সারাদেশে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তের ৮৩ টি জেলা ভিত্তিক কার্যালয় রয়েছে । এড়িয়া অনুযায়ী কার্যালয়ে গিয়ে অফিসিয়ালি সঞ্চয় পত্র কিনতে পারবেন।

  • বাংলাদেশ ব্যাংক :

দেশের যেকোনো বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিস থেকে সঞ্চয় পত্র কিনতে পারেন সদরঘাট ও ময়মনসিংহ অফিস বাদে।

  • পোস্ট অফিস : 

এটা প্রতিটা এড়িয়াতেই আছে তাই যাতায়াত সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে পোস্ট অফিস ব্যবহার করতে পারেন।

  •  ব্যাংকের মাধ্যমে : 

যেকোনো ব্যাংক থেকে সঞ্চয় পত্র কিনতে পারবেন তবে শরিয়া মোতাবেক পরিচালনা হয় এমন ব্যাংক বাদে। ব্যাংকের মাধ্যমে কেনা সব চেয়ে ভালো মাধ্যম কারন সঞ্চয় পত্রের টাকা গ্রহন ও প্রদান ব্যাংকের মাধ্যমেই হবে। 

সঞ্চয়পত্র ক্রয় করার নিয়ম:

সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে বেশ কিছু নিয়ম মানতে হবে । যথা – 

  • প্রথমেই ব্যাংক একাউন্ট থাকতে হবে, যদি না থাকে তাহলে করে নিতে হবে।
  • এরপর যে পরিমানের সঞ্চয় পত্র কিনতে চান সম পরিমানের টাকা একাউন্ট রাখতে হবে।
  • যে স্থান থেকে সঞ্চয় পত্র কিনতে চান সেখানে যাওয়ার পর একটি ডেবিট ইন্সট্রাকশন দেয়া হবে যেখানে উল্ল্যেখ থাকবে যে, আপনার ব্যাংক একাউন্ট থেকে টাকা সঞ্চয়পত্রে টাকা নেয়া হবে।
  • সম্মতি জানানের এই পর্যায়ে আপনাকে বেশ কিছু ডকুমেন্টস সাবমিট করতে হবে বা দাখিলা দিতে হবে। সেই ডকুমেন্টস গুলো কি সেগুলোও জানিয়ে রাখছি।

সঞ্চয়পত্র ক্রয় করার ডকুমেন্ট সমূহ :

সম্মতি জানানের এই পর্যায়ে আপনাকে বেশ কিছু ডকুমেন্টস সাবমিট করতে হবে  সেই ডকুমেন্টস গুলো হচ্ছে –

  • সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে গ্রাহকের বা ক্রেতার দুই কপি ছবি জমা লাগবে।  
  • এক কপি জাতীয় পরিচয়পত্র ফরম  জমা দিতে হবে।  
  • এক কপি নমিনির ছবি এবং তার জাতীয় পরিচয়পত্র লাগবে।  
  • ব্যাংক কর্তৃক ফরম পূরণ করে জমা দিতে হবে।    
  •  আপনার ব্যাংক হিসাবের চেক বইয়ের একটি পাতা লাগবে যেখানে সঞ্চয়পত্র এমাউন্ট লেখা থাকবে।
  • যদি ২ লক্ষ টাকার অধিক মূল্যে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করেন তবে টিন সার্টিফিকেট লাগবে সেটা  যে কোন কম্পিউটারের দোকান হতে করে নিতে পারেন।

সঞ্চয়পত্র সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সমুহ:

সঞ্চয়পত্র কেনার সময় বেশ কিছু গুরুত্ব পূর্ণ   বিষয় সম্পর্কে জানা উচিত। যেমন-

  •  একক নামে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা কেনা যাবে। 
  • যৌথ নামে সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে।
  • সঞ্চয়পত্রের কোনো প্রসেসিং ফি নেই।
  • ১৮ বছরের কম কেউ সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবে না।
  • সঞ্চয়পত্রে সর্বোচ্চ ৩ জন নমিনির নাম দেয়া যাবে।
  • ১৮ বছরের কম যে কাউকে নমিনি হিসেবে ধরা যাবে।
  • অন্য কারো ই-টিন দিয়ে সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে না।
  • সঞ্চয়পত্র জামানত রেখে লোন নেয়া যাবে না।
  • ১ বছরের আগে সঞ্চয় পরে ভাঙালে কোনো মুনাফা পাওয়া যাবে না।
  • সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ৭২ ঘন্টার মধ্যে টাকা নিদিষ্ট ব্যাংক একাউন্টে যুক্ত হয়ে যাবে।
  • মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে সঞ্চয় পত্র ভাঙতে চাইলে বা টাকা উঠাতে চাইলে সঞ্চয়পত্রের Acknowledgement Copy সাথে নিয়ে, যেখানে সঞ্চয় পত্র করেছেন সেখানে আসতে হবে।
  • ৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রের জন্য ৫% ট্যাক্স ও ৫ লাখ টাকার বেশি মুল্যের সঞ্চয় পত্র কিনলে ১০% ট্যাক্স কাটা হবে।

সঞ্চয়পত্র কারা কিনতে পারবে?

  • ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয় পত্র :

একক বা যৌথভাবে বাংলাদেশি যেকোনো নাগরিক ৫ বছর মেয়াদি সঞ্চয় পত্র কিনতে পারবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই ১৮ বছরের উপর হতে হবে।

  • ৩ বছর মেয়াদি মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয় পত্র : 

এই  সঞ্চায়  পত্রে মূলত ৩ মাস পর পর মুনাফা দেয়া হয়। যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক একক বা যৌথভাবে কিনতে পারবে। এক্ষেত্রে তাকেও অবশ্যই ১৮ বছরের উপর হতে হবে।

  • ৫ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চায় পত্র : 

বাংলাদেশি যেকোনো নারী নাগরিক যার বয়স ১৮ হয়েছে এবং যদি কোনো পুরুষ পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনতে চায় তাহলে তার বয়স ৬৫ হতে হবে।

  • ৫ বছর মেয়াদি পেনশন সঞ্চয় পত্র :

এই  সঞ্চায় পত্র মূলত সরকারি, সেমি সরকারি কর্মচারী তাদের পেনশনে এর টাকায় এই সঞ্চয়পত্র কিনতে হয় ।পেনশন সঞ্চয় পত্রে ৩ মাস অন্তর মুনাফা ধরা হয় ।

সকল সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার:

সকল সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হারনিচে দেয়া হলো –

  • ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র:

১৫ লাখ টাকা  পর্যন্ত <১১.২৮%

১৫ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকা  পর্যন্ত  <১০.৩০%

৩০ লাখ থেকে সর্বোচ্চ পর্যন্ত  < ৯.৩০%

  • ৩ বছর মেয়াদি মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র:

১৫ লাখ টাকা  পর্যন্ত <১১.০৪%

১৫ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকা  পর্যন্ত < ১০.০০%

৩০ লাখ থেকে সর্বোচ্চ  পর্যন্ত < ৯.০০%

  • ৫ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চায়পত্র:

১৫ লাখ টাকা  পর্যন্ত <১১.৫২%

১৫ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত  < ১০.৫০%

৩০ লাখ থেকে সর্বোচ্চ  পর্যন্ত < ৯.৫০%

  • ৫ বছর মেয়াদি পেনশন সঞ্চয়পত্র:

১৫ লাখ টাকা  পর্যন্ত <১১.৭৬%

১৫ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকা  পর্যন্ত <১০.৭৫%

৩০ লাখ থেকে সর্বোচ্চ  পর্যন্ত <৯.৭৫%

আরো পড়ুন :সব ধরনের প্রত্যয়ন পত্র লেখার নিয়ম এবং ফরমেট জানুন।

পরিশেষে :

বলা যাই যে ,প্রাথমিক ভাবে সঞ্চয়পত্র সংক্রান্ত প্রতিটি ডিটেলস সহজ ভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি।  এই ক্ষুদ্র চেষ্টায় কিছুটা উপকার পাবেন । এই সকল তথ্যের ভিত্তিতে সঞ্চায়পত্র কেনা সহজ হবে।   

Write A Comment