আসসালামু আলাইকুম আশা করছি আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছেন। গরম বা শীত আবহওয়ার এই পরির্বতনে অনেকেই সর্দি-কাশিতে ভুগেন! অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, বারবার গোসল করা বা ফ্রিজের ঠান্ডা পানি পান করা এবং অতিরিক্ত ঠান্ডার  কারণে সর্দি-কাশি হতে পারে।বাচ্চা ও বয়স্কদের জন্য সর্দি-কাশির সমস্যা বেশি দেখা যায় । ওষুধ বা সিরাপ খাওয়ার আগে জেনে নিন কিছু ঘরোয়া প্রতিকার, যা সর্দি-কাশিসহ বুকে কফ বা শ্লেষ্মার জন্য বিশেষ কার্যকরী।তাই সর্দি-কাশি হলে প্রথমেই আতঙ্কিত না হয়ে বরং ঘরোয়াভাবে তা সারিয়ে তোলার চেষ্টা করুন। 

সর্দি-কাশি কি:

সাধারণত সর্দি-কাশি ভাইরাস জনিত একটি সমস্যা বা রোগ। যখন বিভিন্ন জীবাণু বা ভাইরাস শ্বাসনালীতে সংক্রমণ করে তখন আমাদের সর্দি দেখা দেয় । সর্দি-কাশি  সংক্রমণের জন্য বিভিন্ন ভাইরাস দায়ী। এগুলোর মধ্যে রয়েছে করোনাভাইরাস, রেস্পিরেটোরি সিংসিশিয়াল ভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস এবং প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ইত্যাদি। তবে সর্দি-কাশির জন্য সব থেকে বেশি দায়ী হল রাইনোভাইরাস। যা সহজেই আক্রমণ করে সর্দি-কাশি বাধিয়ে দেয়।

ঠান্ডা বা শীতের মৌসুমে এই ভাইরাসগুলো দ্রুত সংক্রমিত হওয়ার মত পরিবেশ পায় তাই দ্রুত আক্রমণ করতে পারে। তাই পানিতে বেশিক্ষণ থাকলে অথবা  শীতের সময় এই ভাইরাস গুলো দ্রুত আক্রমণ করে এবং সর্দি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায়। তাই শীত কালে মানুষের বেশি সর্দি-কাশি  হতে দেখা যায়।

সর্দি-কাশির লক্ষণ :

সর্দি- কাশি একটি সংক্রমিত রোগ যা ভাইরাসের সংক্রমনের কারণে হয়ে থাকে। এই ভাইরাস (বিশেষ করে রাইনোভাইরাস) শ্বাসনালির উপরের অংশে সংক্রমণ ঘটায়। সর্দির লক্ষণ সাধারণত ২থেকে ৩ দিনের মধ্যে প্রকাশ পেয়ে যায়। যেমন –

  • বার বার হাঁচি হওয়া। 
  • চোখ, গাল, এবং কপালে চাপ বা ব্যথা অনুভব হওয়া।
  • নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া। 
  • কাশি। 
  • জ্বর। 
  • চোখ দিয়া পানি পড়া। 
  • নাক দিয়ে পানি পড়া। 
  • কোনকিছুর গন্ধ নাকে না লাগলে।

যেহেতু, এই রোগ ভাইরাসের সংক্রমনের কারণে হয়ে থাকে এজন্য  অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করে কোন ভালো ফলাফল পাওয়া যায় না। ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এই রোগ এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। কিন্তু মনে রাখবেন এই রোগের লক্ষণগুলি একটু দীর্ঘস্থায়ী হয়, প্রায় ২১ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। 

সর্দি-কাশি থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায় :

আমরা কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি সম্পর্কে জানব যেগুলো অনুসরণ করে সর্দির লক্ষণগুলি কমানো যাবে অর্থাৎ সর্দি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। নিম্নে দেয়া হলো –

বিশ্রাম: 

সর্দি -কাশি থেকে দ্রুত মুক্তি পেতে পর্যাপ্ত বিশ্রামের প্রয়োজন। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হলে নিয়মিত কাজগুলো বাতিল করে ঘুমকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং দ্রুত ফ্লু থেকে আরোগ্য লাভ করতে পর্যাপ্ত ঘুম জরুরি।

গরম পানি পান করুন :

সর্দি -কাশি থেকে দ্রুত মুক্তি পেতে নিজেকে হাইড্রেড করা প্রয়োজন। হাইড্রেড শরীরের শ্লেষা পাতলা ,নাক বন্ধ ও কাশি পরিস্কার করতে সাহায্য করে। তাই তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করুন এবং প্রচুর পরিমান গরম পানি পান করুন । 

স্টিম নেওয়া:

সর্দি-কাশিতে নাকের বন্ধভাব দূর করার সেরা প্রতিকার হলো স্টিম নেওয়া। এজন্য একটি পাত্রে  গরম পানির নিয়ে ভাপ নিতে পারেন। চাইলে গরম পানির মধ্যে ইউক্যালিপটাস বা চা গাছের তেল মিশিয়ে ভাপ নিলে আরো দ্রুত নাক খুলবে।

গার্গল করা : 

গার্গল সর্দি -কাশি কমাতে বেশ কার্যকর ঘরোয়া পদ্ধতি।গার্গল করলেসর্দি – কাশি ও গলা ব্যথা দুই-ই কমে। এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে আধা চা চামচ লবণ মিশিয়ে ১০/১৫ মিনিট ধরে গার্গল করুন। বিরতি দিয়ে দিয়ে কয়েকবার করুন। 

তুলসি: 

যুগ যুগ ধরে সর্দি-কাশির ঘরোয়া টোটকা হিসেবে তুলসি ব্যবহৃত হয়ে আসে । এতে থাকা অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল এর বৈশিষ্ট্য সর্দি-কাশি সারায়। নাক বন্ধ থাকলেও খুলতে সাহায্য করে ।

প্রথমে তুলসি পাতা ও আদা একসঙ্গে গরম পানিতে ফুটিয়ে নিন। এবার গরম পানিতে কয়েক ফোঁটা মধু মিশিয়ে চায়ের মতো পান করুন। অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগলে এই মিশ্রণটি দিনে দুই থেকে তিন বার পান করলে দ্রুত সুস্থবোধ করবেন।।

আদা ও চা:

সর্দি-কাশি ও গলাব্যথা সারানোর আরেকটি ঘরোয়া উপায় হলো আদা চা। পেট খারাপ থেকে গলা ব্যথা এমনকি মাথাব্যথা পর্যন্ত নানা রোগের নিরাময় ঘটায় এই আদা। 

সর্দি-কাশির জন্য গলা ব্যথা সারাতে এক কাপ পানি কয়েক টুকরো আদা ফুটিয়ে কিংবা আদা চা পান করুন।আদা চাকে আরো সুস্বাদু করতে আপনি কিছু দারুচিনি ও মধু যোগ করতে পারেন। আদার এই পানীয় গলা ব্যথা সারাতে ও বমি বমি ভাব দূর করতে সাহায্য করবে। দিনে ২-৩ বার এই তরল পান করুন।

পেঁয়াজ ও মধু:

পেঁয়াজ ও মধুর মিশ্রণও গলা ব্যথা ও কাশির জন্য একটি দুর্দান্ত প্রতিকার। এতে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য আছে। যা বুকের কফ দূর করতে সহায়তা করে থাকে । মধু গলার খুসখুসে ভাব ও ব্যথা দূর করতেও সাহায্য করে। এজন্য পেঁয়াজের রসের সাথে মধু বা বাদামি চিনি মিশিয়ে পান করুন। 

রসুন, মধুওলেবু:

সর্দি-কাশি ও গলা ব্যথা সারানোর আরো একটি ঘরোয়া উপায় হলো রসুনের ব্যবহার। এক কোয়া রসুন বাটা, ১ চা চামচ মধু, ১টি লেবু ও সামান্য গরম পানি মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে নিন। এই পানীয় পান করলেও মিলবে স্বস্তি।

ভিটামিন সি:

সর্দি-কাশির উপসর্গ ও উপসর্গের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল ও শাকসবজি খান। এক গবেষণা অনুসারে, পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি গ্রহণ করলে দ্রুত শ্বাসনালির সংক্রমণ থেকে স্বস্তি মেলে।

এজন্য আপনি জাম্বুরা, কমলা ও লেবু খেতে পারেন অথবা মধু, লেবুর রস গরম পানিতে মিশিয়ে পান করতে পারেন। ভিটামিন সি বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে আপনার ইমিউন সিস্টেমকে সাহায্য করবে।

তরল খাবার:

সর্দি-কাশি হলে পর্যাপ্ত তরল খাবার খান। নাক বন্ধভাব দূর করতে ও হাইড্রেটেড থাকতে মধুর সাথে পানি ও লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন। এর পাশাপাশি গরম গরম স্যুপ খেতে পারেন।

গরম দুধে হলুদের মিশ্রণ : 

হলুদ মিশ্রিত দুধ সর্দি -কাশি দূর করতে বেশ উপকারী।হলুদ মিশ্রিত দুধ সর্দি -কাশি দূর করতে বেশ উপকারী। হলুদে থাকা কারকুমিন নামের উপাদান বুক থেকে কফ, শ্লেষ্মা দূর করে বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট দ্রুত কমিয়ে দিয়ে থাকে । এর অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান গলা ও বুকের খুসখুসে অস্বস্থি, জ্বালা, ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে।হলুদ আমাদের সর্দি- কাশি দূর করতে সাহায্য করে। হলুদ আমাদের সর্দি- কাশি দূর করতে সাহায্য করে। এজন গরম দুধের মধ্যে অল্প হলুদ মিশিয়ে পান করুন ।

লবঙ্গ : 

লবঙ্গের রস গলায় আরাম দেয় এবং জীবাণু দূর করতে সাহায্য করে। তাই সর্দি -কাশি হলে মুখে একটা লবঙ্গ রেখে মাঝেমধ্যে একটু চাপ দিয়ে রস বের করে গিলে ফেলুন।এতে আরাম পাবেন। 

আরো পড়ুন :পুরুষের সৌন্দর্য দাড়ি গজানোর ঘরোয়া উপায়।

পরিশেষে :

বলা যে, সর্দি-কাশির সমস্যা হলে ঔষুধ খাওয়ার আগে সব সময় চেষ্টা করবেন ঘরোয়া উপায়ে সারানোর। সর্দি- কাশি থেকে মুক্তির উপায় অবলম্বন করে তিন থেকে চার দিন অপেক্ষা করে যদি  সর্দি -কাশি ভালো হয় আবার অবস্থা বেশি খারাপ হয় তাহলে ডাক্তারের কাছে যাবে এবং ওষুধ গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।

Write A Comment